Adenovirus

অ্যাডিনো: পরিস্থিতি জানায়নি রাজ্য, দাবি স্বাস্থ্যসচিবের

সম্প্রতি রাজ্যে একাধিক শিশু মৃত্যুর পিছনে অ্যাডিনোভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। অধীর জানান, রাজেশ তাঁকে বলেছেন, অ্যাডিনোভাইরাসের উপস্থিতি আগেও ছিল।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ০৫:৫৭
Share:

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। ছবি: পিটিআই।

পশ্চিমবঙ্গের অ্যাডিনোভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক কার্যত অন্ধকারে ছিল বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ দাবি করেছেন। পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে, লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী রাজ্যে অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণকে আজ ডেকে পাঠিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যসচিব তাঁকে জানান, পশ্চিমবঙ্গের অ্যাডিনো সংক্রমণ পরিস্থিতি কেমন ছিল তা রাজ্য মন্ত্রককে জানায়নি। কেন্দ্রের কাছে কোনও ধরনের সাহায্যও চায়নি রাজ্য।

Advertisement

সম্প্রতি রাজ্যে একাধিক শিশু মৃত্যুর পিছনে অ্যাডিনোভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। অধীর জানান, রাজেশ তাঁকে বলেছেন, অ্যাডিনোভাইরাসের উপস্থিতি আগেও ছিল। কিন্তু নাইসেড মন্ত্রককে জানিয়েছে, এ বার বিবর্তনের ফলে অ্যাডিনোভাইরাসের দু’টি স্ট্রেন বা সেরোটাইপের মিশ্রণ ঘটে তৈরি হয়েছে ‘রিকম্বিন্যান্ট ভাইরাস’। অধীর বলেন, ‘‘কেন্দ্রকে পাঠানো নাইসেডের রিপোর্টে ‘অ্যাডিনো ৩’ ও ‘অ্যাডিনো ৭’-এর মিশে যাওয়ার উল্লেখ রয়েছে।’’ স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন, সেই কারণে ওই ভাইরাস শিশুদের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।

এ সপ্তাহের শুরুতেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া দাবি করেছিলেন, রাজ্যের অ্যাডিনো পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অথচ আজ অধীরের কাছে রাজেশ ভূষণ দাবি করেন, রাজ্যের পরিস্থিতি গোড়ায় কতটা খারাপ হয়েছিল সে বিষয়ে রাজ্য কেন্দ্রকে কার্যত অন্ধকারে রেখেছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রক যা জেনেছে, তা সংবাদমাধ্যম থেকেই জেনেছে। অধীর জানান, রাজেশ বলেছেন, অ্যাডিনোভাইরাসের কারণে ১১ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে রাজ্য শুধু জানিয়েছিল। সেখানে মন্ত্রক সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছে, অ্যাডিনোভাইরাসের কারণে পশ্চিমবঙ্গে ৯৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তখন অধীর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবকে জানান, রাজ্যে দিন কয়েক আগে পর্যন্ত ১৩৭ জন শিশু অ্যাডিনোভাইরাস এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগে মারা গিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভোগা ১১৫০টি শিশুর নমুনা এ যাবৎ পরীক্ষা হয়েছে। যার মধ্যে অর্ধেক নমুনাই হল বিসি রায় হাসপাতালের। ওই হাসপাতালের অন্তত ৪৯ শতাংশ নমুনাতেই অ্যাডিনোভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে বলে অধীরের কাছে দাবি করেন রাজেশ। যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই মত স্বাস্থ্যসচিবের।

Advertisement

অধীর জানান, রাজেশের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে অ্যাডিনোভাইরাসের পরীক্ষা কম হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষা বাড়লে সংক্রমণের যথাযথ চিত্রটি পাওয়া সম্ভব হত। একই ভাবে রাজ্যে কোভিড পরীক্ষা কম হচ্ছে বলেও অধীরকে জানিয়েছেন রাজেশ। গোটা দেশে যখন কোভিড সংক্রমণ নতুন করে বাড়ছে, তখন পরীক্ষা কম হলে রাজ্যে আগামী দিনে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। আজ স্বাস্থ্যসচিবকে অধীর জানান, তাঁর জেলা মুর্শিদাবাদের নওদা এলাকায় জলবসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। অধীর বলেন, ‘‘আজ বহরমপুর ফিরে যাচ্ছি শুনে, স্বাস্থ্যসচিব রাজ্যে কর্মরত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য আঞ্চলিক অধিকর্তাকে আমার সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দিয়েছেন।’’

রাজ্যের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগের খণ্ডন করে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তুনু সেন বলেন, ‘‘কেন্দ্রের অসহযোগিতা সত্ত্বেও করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফল হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। এ যাত্রায় সে ভাবেই অ্যাডিনো মোকাবিলাতেও সফল হবে রাজ্য।’’ একই সঙ্গে অধীর চৌধুরীর ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘বাংলার জনপ্রতিনিধি হয়ে অধীর চৌধুরী বাংলা বিদ্বেষী কাজকর্ম করে বেড়ান। সেই কারণে বাংলার মানুষ তাঁর দলকে যোগ্য জবাব দেন নির্বাচনে। তাই কখনও বাটি হাতে বিজেপি আবার কখনও সিপিএম-আইএসএফের সমর্থন ভিক্ষে করতে হয় তাঁকে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement