দেশের এক কোটির বেশি পরিবার নরেন্দ্র মোদীর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। স্বেচ্ছায় রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছেন। অথচ মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতেই তেমন সাড়া মেলেনি। একই দশা ‘দিদি’-র রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও।
সিপিএম ও কংগ্রেসের নেতারা এখানেও দিদি-মোদীর গোপন আঁতাঁতের অভিযোগ তুলবেন কি না জানা নেই! কিন্তু পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তথ্য বলছে, স্বেচ্ছায় রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ছাড়ার ক্ষেত্রে গুজরাত ও পশ্চিমবঙ্গ একই ভাবে পিছিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের যত পরিবার রান্নার গ্যাস ব্যবহার করেন, তার মাত্র ৩ শতাংশ ভর্তুকি নেবেন না বলে স্বেচ্ছায় জানিয়েছেন। একমাত্র অন্ধ্র পশ্চিমবঙ্গের পিছনে। গুজরাতে এই হার মাত্র ৬.৬ শতাংশ। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের রাজ্য ওড়িশার অবস্থাও তথৈবচ। সে রাজ্যে রান্নার গ্যাস ব্যবহারকারী পরিবারের মাত্র ৪ শতাংশ ভর্তুকি ছেড়েছেন।
গুজরাত পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় শিল্পোন্নত রাজ্য। মানুষের মাথা পিছু আয় অনেক বেশি। তা হলেও ভর্তুকি ছাড়ার ক্ষেত্রে দু’টি রাজ্যেরই মনোভাব একই রকম কেন?
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীর যুক্তি, ‘‘ভর্তুকি ছাড়ার সঙ্গে আয়ের খুব একটা সম্পর্ক নেই। প্রথমে ভেবেছিলাম শুধু কোটিপতি বা লাখপতিরাই ভর্তুকি ছাড়তে রাজি হবেন। কিন্তু অনেক মধ্যবিত্ত, পেনশনের টাকায় সংসার চালানো পরিবারও ভর্তুকি ছেড়েছেন, যাতে গরিবরা কাঠকুটোর বদলে এলপিজি-তে রান্না করতে পারেন।’’ পরিসংখ্যানও তা-ই বলছে। মিজোরাম, নাগাল্যান্ডের মতো দু’টি রাজ্যে ভর্তুকি ছাড়ার হার সব থেকে বেশি। সেখানে যত জন রান্নার গ্যাস ব্যবহার করেন, তার ১৭-১৮ শতাংশ পরিবার ভর্তুকি ছেড়েছেন।
গত বছর মার্চে প্রধানমন্ত্রী আবেদন করেছিলেন, যাঁদের রান্নার গ্যাসে ভর্তুকির প্রয়োজন নেই, তাঁরা সেটা ছেড়ে দিন। সেই সাশ্রয়ের অর্থে গরিব পরিবারে রান্নার গ্যাস পৌঁছে দেওয়া হবে। তার পর থেকেই দেশ জুড়ে মোদীর ছবি দিয়ে ‘গিভ ইট আপ’-এর প্রচার শুরু হয়ে যায়।
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, এক বছর এক মাসে দেশের ১ কোটি ১৩ লক্ষ ‘মহানুভব’ পরিবার স্বেচ্ছায় ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছেন। এর থেকে যে অর্থ সাশ্রয় হয়েছে, তাতে ৬০ লক্ষ গরিব পরিবারে রান্নার গ্যাস পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সব থেকে এগিয়ে রয়েছে পাঁচটি রাজ্য—মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, কর্নাটক ও তামিলনাড়ু। গোটা দেশের ‘মহানুভব’ পরিবারের প্রায় অর্ধেকই এই পাঁচ রাজ্যে।
মহারাষ্ট্রে ১৬.৪৪ লক্ষ, উত্তরপ্রদেশে ১৩ লক্ষ পরিবার গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছেন। গুজরাতে সংখ্যাটা মাত্র ৪.৩৯ লক্ষ। পশ্চিমবঙ্গে ৩.৪২ লক্ষ। ওড়িশায় আরও কম। মাত্র ১.৩৩ লক্ষ। এখন পরিবার পিছু ১২টি এলপিজি সিলিন্ডার ভর্তুকিতে দেওয়া হয়। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমে যাওয়ায় ভর্তুকিতে পাওয়া সিলিন্ডারের সঙ্গে বাজার দরের ফারাক এখন ১০০ টাকার কাছাকাছি।
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভবিষ্যতে বাজার দর বেড়ে গিয়ে মানুষের উপর বোঝা বাড়লে ফের কেউ ভর্তুকি নিতে শুরু করতে পারেন।
এক কোটি পরিবারের এই সাড়ায় ভর করেই প্রধানমন্ত্রী আগামী ১ মে থেকে দারিদ্রসীমার নীচের পরিবারের মহিলাদের জন্য বিনা মূল্যে রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার প্রকল্প চালু করবেন। এক বছর আগে মোদী বলেছিলেন, ‘‘নেওয়ার মতো দেওয়াতেও আনন্দ রয়েছে।’’ তবে তাঁর নিজের রাজ্যের মানুষ সেই আনন্দে ভাগিদার হতে চাইছে না, সেটাই যা দুঃখের।