চতুর্দশ প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
ভারত কারও পাসপোর্টের রং দেখে না, রক্তের সম্পর্কটা দেখে। বেঙ্গালুরুতে প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলনে এমনই বার্তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। ভারতীয় বংশোদ্ভুত মানুষ পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাস করুন, যে কোনও প্রয়োজনে ভারত তাঁর পাশ থাকবে বলে প্রধানমন্ত্রী এ দিন মন্তব্য করেছেন। বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের যে কোনও সঙ্কট থেকে উদ্ধার করতে বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের যে উদ্যোগ, এ দিন প্রধানমন্ত্রীর মুখে তার ভূয়সী প্রশংসা শোনা গিয়েছে। একই মঞ্চ থেকে মোদী এ দিন নোট বাতিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের পক্ষেও জোর গলায় মুখ খুলেছেন।
কর্মসূত্রে দেশের বাইরে থাকেন যে ভারতীয়রা, নিজের নিজের ক্ষেত্রে তাঁদের অপরিসীম দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী মোদী এ দিন প্রবাসী ভারতীয়দের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘‘৩ কোটি প্রবাসী ভারতীয় রয়েছেন। তাঁরা যে শুধুমাত্র তাঁদের সংখ্যার কারণে সমীহ পান তা নয়। নিজেদের অবদানের জন্য তাঁরা সমীহ আদায় করে নেন।’’ ভারতীয় বংশোদ্ভুতদের জন্য যে ‘পার্সনস অব ইন্ডিয়ান অরিজিন’ কার্ড বা পিআইও কার্ড রয়েছে, সেই কার্ডকে এ বার ‘ওভারসিজ সিটিজেনস অব ইন্ডিয়া’ কার্ড বা ওসিআই কার্ডে বদলে নেওয়ার জন্য প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলনে যোগদানকারী প্রতিনিধিদের আহ্বান জানিয়েছেন মোদী। ২০১৬-র ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্ড বদলের সময়সীমা ধার্য করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন সেই সময়সীমা বাড়িয়ে ৩০ জুন, ২০১৭ করা হচ্ছে। এখনও যাঁরা পিআইও কার্ডকে ওসিআই কার্ডে বদলে নেননি, তাঁদের জন্যই এই অতিরিক্ত সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে। তবে এর জন্য কোনও জরিমানা দিতে হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী এ দিন জানান। তাঁর বার্তা, ভারতের সীমার মধ্যে যে ভারতীয়রা বসবাস করেন, তাঁদের প্রতি সরকার যতটা দায়বদ্ধ, বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের প্রতি ভারত সরকারের দায়বদ্ধতা তার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। বিদেশে যখনই কোনও ভারতীয় সঙ্কটে পড়েছেন, বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তৎক্ষণাৎ কী ভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা এ দিন নিজের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিদেশে কোনও ভারতীয় যখনই সঙ্কটে পড়েছেন, তখনই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তাঁদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে সক্রিয় হয়েছেন।’’ এই প্রসঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনার কাছে যে কোনও দেশের পাসপোর্ট থাকতে পারে, কিন্তু যদি আপনি এক জন ভারতীয় হন, আমরা সর্বদা আপনার পাশে আছি। আপনার পাসপোর্টের রংটা কী, সেটা আমরা দেখি না। আমরা রক্তের সম্পর্কটা দেখি।’’ প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে স্বাভাবিক ভাবেই তুমুল করতালিতে এ দিন স্বাগত জানিয়েছেন বেঙ্গালুরুর সম্মেলনে উপস্থিত প্রবাসী ভারতীয়রা।
আরও পড়ুন: নেই রাজনাথ, বৃত্তিও, হতাশ কাশ্মীরি তরুণরা
প্রধানমন্ত্রী এ দিন কালো টাকার বিরুদ্ধে তাঁর ‘জেহাদ’ সম্পর্কেও বেশ কিছু কথা প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলনে বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্নীতি এবং কালো টাকা ভারতকে ভিতরে ভিতরে ধ্বংস করে দিচ্ছিল। এ বিষয়ে একটা অবস্থান নিতেই হত এবং আমরা তা নিয়েছি।’’ মুদ্রা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের যাঁরা বিরোধিতা করছেন, তাঁদের বিঁধে প্রধানমন্ত্রী এ দিন ফের বলেছেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কিছু কালো টাকার ভক্ত এখন আমাদের পদক্ষেপকে জনবিরোধী বলে আখ্যা দিচ্ছেন।’’ কিন্তু এই পদক্ষেপকে প্রবাসী ভারতীয়রা সমর্থন করেছেন বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী এ দিন সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন।