হুদহুদে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু। বৃহস্পতিবার বিশাখাপত্তনমে। ছবি: পিটিআই।
কিছুটা স্বস্তিতে হুদহুদ আক্রান্ত বিশাখাপত্তনম জেলা। বৃহস্পতিবার জেলার বহু জায়গায় বিদ্যুৎ ফিরেছে। উন্নতি হয়েছে মোবাইল পরিষেবারও। হুদহুদে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দরের। তবে এ দিন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান মন্ত্রী অশোক গজপতি রাজু জানিয়েছেন, কাল, শুক্রবার থেকে বিমান পরিষেবা চালু করবে এয়ার ইন্ডিয়া। স্বাভাবিক হচ্ছে রেল ও বাস পরিষেবাও। সব মিলিয়ে এ দিন অনেকটাই ছন্দে ফিরেছে অন্ধ্রপ্রদেশের এই বন্দর শহর।
মোবাইল পরিষেবা কিছুটা স্বাভাবিক হলেও সব জায়গায় তা পৌঁছয়নি। হুদহুদের তাণ্ডবের পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক দিন। তার পরেও টেলিফোন ও মোবাইল পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় এ দিন টেলিকম কর্তাদের কড়া ধমক দেন অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু। টেলিকম কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে রীতিমতো মেজাজ হারিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বলেন, “আপানাদের এই অকর্মণ্যতার জন্য আমি সরাসরি আপনাদের কাছে জবাব চাইছি।” ক্ষুব্ধ নায়ডু আরও বলেন, “তার মানে আপনারা শুধু টাকা রোজগারের কথা ভাবেন। সরকার বা সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন না। আপনাদের অদক্ষতার জন্য আমার ত্রাণসামগ্রী সরবরাহের কাজ আর্ধেক পণ্ড হয়ে যাচ্ছে।” তাঁর আক্ষেপ, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন এসেছিলেন, তখন তাঁরও মোবাইল কাজ করছিল না!
কয়েক দিন পরে বেশ কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বিদ্যুৎ পরিষেবা। অন্ধ্রের পূর্ব বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক কর্তা জানিয়েছেন, এ দিন প্রায় ২ লক্ষ বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। বিশাখাপত্তনম এবং শ্রীকাকুলাম জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটাই স্বাভাবিক। বিশাখাপত্তনমের জেলাশাসক এ যুবরাজ বলেন, “বিশাখাপত্তনমের শহরাঞ্চলের ১০ শতাংশ জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।”
ছন্দে ফিরছে বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দরও। অশোক গজপতি রাজু বলেন, “এয়ার ইন্ডিয়া কাল থেকে পরিষেবা শুরু করছে। পরশু থেকে অনান্য বিমান সংস্থাও উড়ান চালু করতে পারে।” আন্তর্জাতিক উড়ান ১ নভেম্বর থেকে চালু হতে পারে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। হুদহুদের আগে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা যাত্রীরা পেতেন, তা এখন পাওয়া যাবে না। তাই যাত্রীদের সহযোগিতা করারও আর্জি জানিয়েছেন রাজু। তাঁর কথায়, “এখন আমাদের আশু লক্ষ্য, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিমান পরিষেবা চালু করা।”
হুদহুদ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে বিশাখাপত্তনম শহরের। তাই এই বন্দর শহরকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে গড়ে তুলতে চান নায়ডু। তিনি বলেন, “এই বিপদ কেটে যাওয়ার পরেই বিশাখাপত্তনমের জন্য আমরা নতুন করে পরিকল্পনা করব। শুধু গাছ লাগানোই নয়, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এই শহরকে গড়ে তোলা হবে। এই রকম শহর নিয়ে কাজ করেছে, পৃথিবীর সেই সব সেরা পরামর্শদাতাদের পরামর্শ নেওয়া হবে।” বিশাখাপত্তনমকে ‘স্মার্ট সিটি’ বানাতে চেয়েছিলেন মোদী, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নায়ডু।
বিশাখাপত্তনম এবং অন্যান্য হুদহুদ আক্রান্ত জেলায় রেশন দেকান থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। বিশাখাপত্তনমে সব্জির ঘাটতি মেটাতে রাজ্যের অনান্য জেলা থেকে সব্জি আমদানি করা হচ্ছে। সরবরাহ করা হচ্ছে পানীয় জলও।
শুধু বিশাখাপত্তনমে নয়, হুদহুদ আছড়ে পড়েছে উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশাতেও। ওড়িশার ব্রহ্মপুরের একটি পার্কে হুদহুদের হানায় চারটি হরিণের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।