ফলে থুতু লাগাচ্ছেন অভিযুক্ত। ছবি: ভিডিয়ো গ্র্যাব।
ব্যস্ত বাজারের মধ্যে ঠেলাগাড়িতে ফল সাজিয়ে রাখছেন এক ফলবিক্রেতা। তা করতে গিয়ে বার বার মুখে হাত ঢোকাচ্ছেন তিনি। যে ভাবে আঙুলের ডগায় থুতু লাগিয়ে টাকা গোনেন অনেকে, ঠিক সেই ভাবে আঙুলে থুতু নিয়ে একটার পর একটা ফল তুলে সাজিয়ে রাখছেন।
নোভেল করোনা নিয়ে দেশ জুড়ে আতঙ্কের মধ্যেই সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন ভিডিয়ো ছড়িয়েছিল। নিজামউদ্দিনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর আরও বেশি করে আতঙ্ক জেঁকে বসেছিল মানুষের মনে। ইচ্ছাকৃত ভাবে ওই ব্যক্তি জীবাণু ছড়াচ্ছেন বলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা হতে শুরু করে। কিন্তু শেষমেশ জানা গেল, ওই ভিডিয়োটি প্রায় দেড় মাস পুরনো। যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে জীবাণু ছড়ানোর অভিযোগ, তিনি মানসিক ভাবে অসুস্থ বলেও দাবিকরে তাঁর পরিবার।
‘দেশি মোহিতো’ নামের একটি টুইটার হ্যান্ডল থেকে সম্প্রতি ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসে। তাতে বলা হয়, থুতু মাখানো ফল বিক্রি করে জীবাণু ছড়াচ্ছেন ওই ব্যক্তি। তাই সকলের সাবধান হওয়া উচিত। মুহূর্তের মধ্যে ওই ভিডিয়োটি ভাইরাল হয়ে যায়। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৭৪ হাজারের বেশি মানুষ ভিডিয়োটি দেখেছেন। সেটি রিটুইট করেছেন সাড়ে ৪ হাজার মানুষ। সেই ভিডিয়োর সূত্র ধরেই শুক্রবার অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি শেরু মিঞাকে গ্রেফতার করে মধ্যপ্রদেশের রায়সেনা জেলার পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ২৬৯ এবং ২৭০ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হতে জানা যায়, যে ভিডিয়ো নিয়ে এত হইচই সেটি আদতে ১৬ ফেব্রুয়ারির।
এই ভিডিয়োই ভাইরাল হয়।
আরও পড়ুন: এক লাফে ৬০১ বেড়ে দেশে করোনা আক্রান্ত ২৯০২, মৃত্যু বেড়ে ৬৮
রায়সেনার পুলিশ সুপার মনিকা শুক্ল বলেন, ‘‘ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিয়োটি যিনি আপলোড করেছিলেন, প্রথমে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি আমরা। সেখান থেকেই অভিযুক্তের নাগাল মেলে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। কেন উনি এমন আচরণ করছিলেন তা খোঁজার চেষ্টা চলচে। শেরু মিঞার বিরুদ্ধে এফআইআরও দায়ের হয়েছে।’’ কিন্তু তিনি শুধু পচা ফল সরিয়ে রাখছিলেন, জেরায় শেরু তাঁদের এমনটাই জানিয়েছেন বলেও জানান মনিকা শুক্ল। শেরুর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ওই পুলিশ আধিকারিক। এমনকি তাঁর শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস রয়েছে কি না, তা-ও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তবে গোটা ঘটনায় তাঁরা একঘরে হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন শেরুর মেয়ে ফিজা। তিনি জানান, মারধর করেই তাঁর বাবাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তার পর থেকে নানা জায়গা থেকে ফোন আসছে তাঁদের কাছে। তাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন তাঁরা। তাঁর বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন বলেও দাবি করেন ফিজা। তিনি জানান, বছর দশেক আগে তাঁদের দুধের ব্যবসা ছিল। তাতে ভালই লাভ হত। এমনকি বেশ কিছু কর্মচারীও তাঁর বাবার অধীনে কাজ করতেন। কিন্তু আচমকা ব্যবসা ধাক্কা খায়। তাতেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন শেরু মিঞা। ভিডিয়োয় যে ভাবে ফল গুনতে দেখা গিয়েছে তাঁকে, আসলে ওই ভাবে নোট গোনার অভ্যাস ছিল তাঁর।
আরও পড়ুন: মোদীর দীপাবলিতে লোডশেডিং থাকবে উত্তরপ্রদেশে, গ্রিড-উদ্বেগ সারা দেশে
দেড় মাসের পুরনো একটা ভিডিয়ো নিয়ে হঠাৎ এত হইচই কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ফিজা। তাঁর যুক্তি, ভিডিয়োয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে জ্যাকেট পরে রয়েছেন বাবা। করোনা নিয়ে চার দিকে যখন আতঙ্কের পরিবেশ, সেইসময় ইচ্ছাকৃত ভাবে ওই ভিডিয়োটি প্রকাশ করে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।