কোচানিয়ান মেনন ও পিভি লক্ষ্মী আম্মালের বিয়ে। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।
প্রেমে পড়ার কোনও বয়স নেই, ষাটোর্ধ্ব এই ‘যুবক-যুবতী’ যেন ফের একবার সেটাই দেখিয়ে দিলেন। এক জনের বয়স ৬৭, অন্য জনের ৬৬, মাস দুয়েক আগে সিদ্ধান্ত নেন বাকি জীবনটা পরস্পরের হাত ধরে কাটিয়ে দেবেন। সেই মতো শনিবার ধুমধাম করে বিয়েও করে নিলেন তাঁরা। পরিচয়টা তাঁদের ৩০ বছরের পুরনো। তবে বিয়ের সিদ্ধান্ত মাস দুয়েক আগেই নিয়েছিলেন। তাঁদের চার হাত এক করতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের এক মন্ত্রীও।
কেরলের ত্রিশূরে রামবর্মপুরমের সরকারি বৃদ্ধাশ্রম ইতিহাস তৈরি করল। রাজ্যের সরকারি কোনও বৃদ্ধাশ্রমে বিয়ের ঘটনা এই প্রথম। শনিবার পরিচিতদের উপস্থিতেবিয়ে করলেন কোচানিয়ান মেনন ও পিভি লক্ষ্মী আম্মাল। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেরলের কৃষিমন্ত্রী ভিএস সুনীল কুমার-ও।
কোচানিয়ান ও আম্মাল পরস্পরকে প্রায় ৩০ বছর ধরে চেনেন। কোচানিয়ান ও আম্মাসের স্বামী পূর্ব পরিচিত ছিলেন। ২১ বছর আগে আম্মালের স্বামী মারা যান। মৃত্যুশয্যায় কোচানিয়ানকে ডেকে বলেন, তাঁর স্ত্রীর খেয়াল রাখতে। তার কয়েকদিনের মধ্যেই মৃত্যু হয় আম্মালের স্বামীর।
স্বামীর মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন একাই থেকেছেন আম্মাল। তখন নিয়মিত আম্মালের খোঁজ খবর নিতেন, প্রয়োজন মতো তাঁকে সাহায্য করতেন কোচানিয়ান। এর পর বছর কয়েক আগে নিজের বাড়ি বিক্রি করে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান আম্মাল।
আত্মীয়র বাড়িতে যাওয়ার পরও প্রথমে যোগাযোগ ছিল দু’জনের মধ্যে। বিপদে আপদে আম্মালের পাশে থেকেছেন কোচানিয়ান। কিন্তু তার পর আস্তে আস্তে যোগাযোগ কমে আসে।
বছর দুয়েক আগে রামবর্মপুরমের বৃদ্ধাশ্রমে চলে আসেন, সেখানে জীবনের বাকিটা কাটিয়ে দেবেন ঠিক করেনআম্মাল। ফের যোগাযোগ গড়ে ওঠে কোচানিয়ানের সঙ্গে। সেই যোগাযোগ শেষ পর্যন্ত এক সঙ্গে পথ চলার অঙ্গীকারে বদলে যায় মাস দুয়েক আগে, যখন কোচানিয়ানও ওই বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা হয়ে যান।
কোচানিয়ান বৃদ্ধাশ্রমে চলে আসার পর দুই পুরনো বন্ধু এবার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা বাকি জীবনটা স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই কাটিয়ে দেবেন। তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে শুভেচ্ছা জানান বৃদ্ধাশ্রমের বাকি সদস্যরাও।
আরও পড়ুন: বনের রাজার আক্রমণের মুখে বাঘ, শেষ পর্যন্ত ফল কী হল দেখুন
প্রথমে ঠিক হয় ৩০ ডিসেম্বর তাঁদের বিয়ে হবে। কিন্তু কোনও কারণে সেটি এগিয়ে আনা হয়, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর তাঁরা ছাতনাতলায় বসেন। এমনকি আগের দিন শুক্রবার মেহেন্দির অনুষ্ঠানও হয় ধুমধাম করে। তাতে বৃদ্ধাশ্রমের সকলেই অংশ নেন।
বিয়ের দিন অনুষ্ঠানে শুধু উপস্থিত থাকাই নয়, কেরলের কৃষিমন্ত্রী সুনীল, আম্মালের হাত কোচানিয়ানের হাতে তুলে দেন। সুনীল ফেসবুকে লেখেন, “এটি তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা স্মরণীয় দিন।” ফেসবুকে কয়েকটি ছবিও পোস্ট করেছেন সুনীল। সোশ্যাল মিডিয়ায় নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রচুর মানুষ।