অরুণা শানবাগ, হাসপাতালের বেডে। ছবি- সংগৃহীত।
সুপ্রিম কোর্টের রায়টা যদি সে দিন আসত, অরুণা শানবাগকে তা হলে ৪২ বছর ধরে অসম্ভব যন্ত্রণা সহ্য করে বেঁচে থাকতে হত না!
নিউমোনিয়ায় ভুগে ২০১৫-র ১৫ মে অরুণার মৃত্যু হওয়ার আগে পরোক্ষে তাঁর স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য শীর্ষ আদালতে আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দিয়েছিল। তার ফলে মৃত্যুর আগে আরও ৪ বছর অসম্ভব যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল অরুণাকে।
শুক্রবার একটি ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, মৃত্যুশয্যায় যাঁরা নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছেন, এ বার তাঁদের স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হবে।
অরুণার জীবনে মর্মান্তিক ঘটনাটা ঘটেছিল ৪২ বছর আগে। ১৯৭৩-এর ২৭ নভেম্বর।
১০ বছর বয়সে বাবাকে হারানো অরুণা রামচন্দ্র শানবাগ কর্নাটকের হলদিপুর থেকে মুম্বইয়ের পারেলে গিয়েছিলেন কিংগ এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল (কেইএম) হাসপাতালে নার্সিংয়ের ট্রেনিং নিতে। কিছু দিন পর ওই হাসপাতালেরই এক ডাক্তারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
আরও পড়ুন- ঐতিহাসিক! বিশেষ অবস্থায় স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ, বলল সুপ্রিম কোর্ট
আরও পড়ুন- শামির বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করল পুলিশ
’৭৩ সালের ২৭ নভেম্বর ওই হাসপাতালেরই এক ওয়ার্ড-বয় চড়াও হয় অরুণার উপর। তিনি যখন পোশাক বদলাচ্ছিলেন, তখনই আচমকা অরুণার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওয়ার্ড-বয় সোহনলাল ভরত বাল্মীকী। কুকুর বাঁধার চেন দিয়ে অরুণার গলা বেঁধে ফেলে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। পরের দিন সকালে যখন অরুণাকে উদ্ধার করা হয়, তখন দেখা যায় তিনি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মাটিতে পড়ে রয়েছেন। মেঝে ভেসে যাচ্ছে রক্তে। কুকুর বাঁধার চেন এত জোরে চেপে বসেছিল অরুণার গলা ও ঘাড়ে যে, ৮ ঘণ্টার জন্য তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছতে পারেনি। তার পরেই কোমায় চলে যান অরুণা। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ৪ দশক ধরে কোমাতেই ছিলেন তিনি। হাসপাতালের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বেডে।
কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সরা ৪ দশক ধরে পদে পদে নজর রাখতেন তাঁর উপর। তাঁকে টিউব দিয়ে খাওয়ানো হত। তাঁকে নিয়মিত পরিষ্কার করানো হত। ফলে ৪ দশক ধরে কোমায় থাকলেও একটুও ‘বেড সোর’ হয়নি অরুণার। সেই ওয়ার্ড-বয় পরে অভিযুক্ত হয় চুরি ও নির্যাতনের অভিযোগে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল না বলে ৭ বছর করে ২ বার জেল খেটে সে ছাড়াও পেয়ে যায়।
অরুণাকে যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল টানা ৪২ বছর। আজ থেকে ৯ বছর আগে সুপ্রিম কোর্টে পরোক্ষে অরুণার স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি জানান সাংবাদিক ও সমাজকর্মী পিঙ্কি বিরানি। তাঁর আর্জি ছিল, যে লাইফ-সাপোর্ট ব্যবস্থায় অরুণাকে কৃত্রিম ভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে, তা তুলে নিয়ে অরুণার মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করা হোক। কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সরা পিঙ্কির সেই আর্জির তীব্র বিরোধিতা করেন। তার প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট পিঙ্কির আর্জি খারিজ করে দেয়। তবে শীর্ষ আদালত তখন এও বলেছিল, পিঙ্কি যা চাইছেন, তার জন্য হাসপাতালের কর্মীদের রাজি হতে হবে। আর তাতে মুম্বই হাইকোর্টের অনুমোদন থাকতে হবে। তবে সেই প্রথম শীর্ষ আদালত স্বীকার করেছিল, পরোক্ষে স্বেচ্ছামৃত্যুরও আইনি স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।