পশ্চিমবঙ্গে তাঁর এক নামজাদা সহকর্মী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পেনশনের ফাইল আটকে গিয়েছিল অনেক দিন। সে অবশ্য প্রতিপক্ষের সরকারের জমানায়। কেরলে এখনও জনপ্রিয়তম নেতা হয়েও তাঁর বেতনের ফাইল আটকে নিজেদেরই সরকারের ঘরে!
শুধু শুকনো মর্যাদায় যে কাজ নেই, কাজ করাতে গেলে মাইনেটাও লাগে— এই হক কথা স্মরণ করিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন কেরলে সিপিএমের প্রবীণ নেতা ভিএস অচ্যুতানন্দন। রাজ্যে পিনারাই বিজয়ন শিবিরের কাছে তিনি বহু দিনই ব্রাত্য। এ বার বাম জোট এলডিএফ ক্ষমতায় ফেরার পরে তাঁর অবস্থার প্রথমে পরিবর্তন হয়নি। রাজ্য সম্মেলন থেকে ওয়াকআউটের পরে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী তো বটেই, রাজ্য কমিটি থেকেও বাদ পড়েছিলেন। বিতর্কের পরে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির হস্তক্ষেপে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভিএস-কে রাজ্যের প্রশাসনিক কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ দিয়েছিল বিজয়নের সরকার। যে পদের মর্যাদা পূর্ণমন্ত্রীর সমতুল। কিন্তু মর্যাদাই সার! মাসছয়েক ধরে বেতনই আসেনি চেয়ারম্যানের জন্য! তাঁর অফিস চালানোর জন্য যে কয়েক জন কর্মী আছেন, তাঁদেরও এই কয়েক মাস কাজ করতে হচ্ছে বিনা পয়সায়। বেগার খাটতে রাজি নন, জানিয়ে দিতে শুরু করেছেন তাঁরা।
বেগতিক দেখে ভিএস এ বার চিঠি দিয়ে তাঁর বেদনার কথা জানিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। তাঁর বক্তব্য, আগে এক বার মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও লাভ হয়নি। প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান পদে ভিএস-কে নিয়ে আসার জন্য কেরল বিধানসভায় বিল পাশ করেছিল সরকার পক্ষ। যাতে লাভজনক পদের আওতায় বিষয়টি পড়ে জটিলতা তৈরি না হয়। কিন্তু সে সব করার পরে অন্য জটিলতায় ফেঁসে গিয়েছে ভিএসের ভাগ্য! চেয়ারম্যান পদে তাঁর নিয়োগ, তার জন্য তাঁর প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা সব উল্লেখ করে সরকারি বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়েছিল। কিন্তু তাঁর নিজস্ব অফিসের কর্মীদের কাকে কত বেতন দেওয়া হবে, তার কোনও নির্দিষ্ট উল্লেখ সেখানে ছিল না।
আরও পড়ুন:
প্রাথমিকে নতুন শিক্ষকদের বদলি নিয়ে পার্থের দুই সুরে বিভ্রান্তি
চিঠিতে ভিএস জানান, কমিশনের চেয়ারম্যান হিসাবে সরকারি বাড়ি ও গাড়ি তিনি পেয়েছেন। কিন্তু গত অগস্টে পদে বসার পর থেকে বেতন নেই! সিপিএম সূত্রের খবর, তিরুঅনন্তপুরম থেকে পাঠানো চিঠি দিল্লি ঘুরে তিরুঅনন্তপুরমেই ফিরেছে। এমনিতেই নানা বিষয়ে দলকে ভিএস এত চিঠি লেখেন, রাজ্য স্তরে সব চিঠি তেমন গুরুত্বই পায় না! এ বারও দলের উচ্চ স্তরে না়ড়াচা়ড়া হওয়ার পরে রাজ্য সরকার নড়ে বসেছে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক অবশ্য জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকবে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘কোন দফতর ওই কমিশনের চেয়ারম্যান এবং তাঁর নিজস্ব অফিসের কর্মীদের বেতনের বিষয়টা দেখবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি হয়েছে বলে প্রশাসনিক স্তর থেকে জানা গিয়েছে। সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া হবে।’’
বুড়ো হাড়ে ভিএস অবশ্য বুঝছেন, গালভরা মর্যাদা আর কাজ চালানোর কড়ি আদায়ে বেশ ব্যবধান!