বাঘের ঘরেই আপাতত ঘাঁটি গেড়েছেন ঘোগেরা।
থুড়ি, উত্তরাখণ্ডের কংগ্রেস বিধায়কেরা।
লাক্সারি ট্রিপ নয়! নয় বিহারের বিধায়কদের মতো ‘ভাল কাজ করার পুরস্কার’ হিসেবে জঙ্গল সাফারির পরিকল্পনাও। এ হল সরকার বাঁচাতে নিজেদের বিধায়কদের গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে রাখার কংগ্রেসী কৌশল! বিজেপি যাতে তাঁদের টিকিও ছুঁতে না পারে, সে জন্য জিম করবেটের ঘন জঙ্গলকেই ভরসা করছেন উত্তরাখণ্ডের কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত। সরকার বাঁচাতে আপাতত তাঁর ভরসা দক্ষিণ রায়!
উত্তরাখণ্ডে টানাপড়েন চলছে কয়েকদিন ধরেই। কংগ্রেসের ৯ জন বিদ্রোহী বিধায়ক বিজেপির দিকে ঝুঁকে পাল্টা সরকার বানানোর খেলায় নেমে পড়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী রাওয়াতকে ২৮ মার্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে বলেছেন রাজ্যপাল কে কে পল। এই এক সপ্তাহ ধরে বাকি বিধায়কদের ধরে রাখাটাও বিরাট চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। কেন না, বিজেপি শিবিরে মধুর খোঁজে আর কেউ ভিড়বে কি না, কে বলতে পারে? তাই সময় নষ্ট করেননি মুখ্যমন্ত্রী। ভাঙন আটকাতে জঙ্গলে অজ্ঞাতবাসের পরিকল্পনা ছকে ফেলেছেন তিনি।
বিশাল অভয়ারণ্যের কোনও প্রান্তে, কোন হোটেলে বিধায়কদের রাখা হয়েছে, তা নিয়ে মুখে কুলুপ কংগ্রেসের। আত্মগোপনের জায়গা খুঁজে বার করার ভার দেওয়া হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ রঞ্জিত রাওয়াতকে। সূত্রের খবর, দিন দু’য়েক আগে রাজ্যের সশস্ত্রধারা হেলিপ্যাড থেকে বিধায়কদের নিয়ে তিনটি চপার উড়ে গিয়েছে জিম করবেটের দিকে। যাতে রয়েছেন কংগ্রেস ও পিডিএফের ২৮ জন বিধায়ক। ৫২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জূড়ে ছড়িয়ে থাকা জিম করবেটের বিজনারি, জির্না, ডিকালা বা ঢেলা জোনের কোন হোটেল বা রিসর্টে অজ্ঞাতবাসে রয়েছেন বিধায়কেরা, তা কেবল রঞ্জিত ও হাতে গোনা কয়েকজনই জানেন। বিধায়কদের মোবাইলও জমা দিতে হয়েছে। রিসর্ট বা হোটেলের ফোন ব্যবহারেও রয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগেও ব্যাপক কড়াকড়ি। যে ভাবেই হোক বাঁচাতে হবে সরকারকে!
ভারতীয় রাজনীতিতে এ ধরনের অভিযান যদিও নতুন নয়। বাঘের ডেরায় যাওয়ার চমকটা নতুন ঠিকই, তবে সময়ে সময়ে এমন একাধিক নাটকের সাক্ষী থেকেছে দেশের রাজনীতি। সরকারের সঙ্কট কিংবা নতুন সরকার গড়ার আগে প্রতিপক্ষের হাত থেকে নিজেদের শিবিরকে রক্ষা করতে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে লুকোচুরি খেলার উদাহরণ অনেক। নব্বইয়ের দশকে শ্বশুর এন টি রামা রাওয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন জামাই চন্দ্রবাবু নাইডু। তাঁর সমর্থনে এগিয়ে আসেন অন্ধ্রের দু’শো বিধায়ক। নাইডু তাঁদের রেখে দেন একটি নিশ্ছিদ্র এলাকায়। একেবারে ভোটাভুটির দিন গুপ্তস্থান থেকে বেরিয়ে আসেন ওই বিধায়কেরা। সরকার গড়েন নাইডু। দক্ষিণের মতো অসংখ্য উদাহরণ উত্তর ভারতেও। এক দশক আগে বিজেপি যাতে তাঁর দলের বিধায়কদের ভাঙাতে না পারে, সে জন্য তাঁদের হোস্টেলে তালাবন্ধ করে রেখেছিলেন মায়াবতী। ২০১০-এ একপ্রস্ত নাটক হয় দক্ষিণ ভারতের কর্নাটকে। ইয়েদুরাপ্পা সরকারকে ফেলতে প্রায় শ’খানেক বিজেপি বিধায়ককে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় গোয়ায়। নেতৃত্বে এইচ ডি দেবগৌড়ার পুত্র এইচ ডি কুমারস্বামী। গোয়ার রিসর্টে রীতিমতো কড়া পাহারায় রাখা হয়েছিল বিধায়কদের। তখনও মোবাইল ও ফোন ব্যবহারে কড়াকড়ি ছিল ভীষণ রকমের।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এ বার বিধায়কদের জঙ্গলে আটকে রেখেও সনিয়া গাঁধীরা কী উত্তরাখণ্ডে সরকার বাঁচাতে পারবেন? আগামী সোমবার কী হবে, তা নিয়ে রয়েছে টানটান উত্তেজনা।