শোচনীয় পরাজয়— দলের, মুখ্যমন্ত্রীরও। —ফাইল চিত্র।
উত্তরাখণ্ডে অপ্রত্যাশিত ধাক্কা খেল কংগ্রেস। দুপুর গড়িয়ে যাওয়া পর্যন্ত ছবিটা যে রকম, তাতে ম্যাজিক ফিগার ছাড়িয়ে অনেক উপরে উঠে গিয়েছে বিজেপি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাসে জল ঢেলে রিং-এর অনেক বাইরে হরীশ রাওয়াত শিবির। মুখ্যমন্ত্রী হরীশ রাওয়াত নিজেও দু’টি কেন্দ্রেই পরাজিত হয়েছেন।
৭০ আসনের উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৩৬টি আসন। ২০১২-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সামান্য ব্যবধানে পিছনে ফেলে সে রাজ্যের দখল নিয়েছিল কংগ্রেস। এ বারও লড়াইটা সে রকমই হাড্ডাহাড্ডি, বলেছিল ওয়াকিবহাল মহল। মুখ্যমন্ত্রী হরীশ রাওয়াত তথা কংগ্রেসের পাল্লা সামান্য হলেও ভারী, বলেছিলেন রাজনৈতিক সমীক্ষকরা। সেই আভাস পেয়েই পাহাড়ি রাজ্যের নির্বাচনী ময়দানে কোমর বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রাহুল গাঁধী। উত্তরাখণ্ডের একের পর এক নির্বাচনী সভা থেকে রাহুলের আহ্বান ছিল, ‘‘কংগ্রেসকে আবার ক্ষমতায় ফেরান, আমি নিজে সরকারের কাজের উপর নজর রাখব।’’ বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফলেও আভাস মিলেছিল, উত্তরাখণ্ডে অ্যান্টি-ইনকামবেন্সি-র হাওয়া সে ভাবে কাজ করেনি। বিজেপির পক্ষে জেতা কঠিন, হরীশ রাওয়াতই ফের ফিরতে পারেন ক্ষমতায়, এমন কথা বলতে শুরু করেছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই।
শনিবার সকালে ইভিএম খুলতেই কিন্তু দেখা গিয়েছে, উত্তরাখণ্ড সম্পর্কে প্রায় সব পূর্বাভাসই ভুল ছিল। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কোনও চিহ্ন মেলেনি পাহাড়ি রাজ্যে। ৭০টি আসনের মধ্যে ৫৪টি আসন যাচ্ছে বিজেপির দখলে। কংগ্রেস ১৩টি আসন পেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী হরীশ রাওয়াত দু’টি আসন থেকে লড়াই করছিলেন— হরিদ্বার গ্রামীণ এবং কিছা। দু’টি আসনেই তাঁকে হারের মুখ দেখতে হয়েছে।
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে উত্তরাখণ্ডে বিধানসভাওয়াড়ি ফল যা ছিল, তার তুলনায় কংগ্রেসের ফল এ বার ভাল। সে বার উত্তরাখণ্ডে মাত্র ৭টি বিধানসভা আসনে এগিয়ে ছিল কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: পদ্ম-কাঁটায় টালমাটাল কংগ্রেস, আরও সংশয়ে রাহুলের ভবিষ্যৎ
এ বার ১৩টি। কিন্তু লোকসভা ভোটের সময় দেশের অন্য অনেকগুলি রাজ্যের মতো উত্তরাখণ্ডেও যে মোদী-ঝড় ছিল, এ বার তার ছিঁটেফোঁটাও নেই বলে কংগ্রেসের দাবি ছিল। তাই ৩৫ পেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে রাহুল গাঁধী, হরীশ রাওয়াতরা বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু গণনা শুরু হতেই স্পষ্ট হয়ে গেল, ৩৫ পেরনো তো দূরের কথা, প্রত্যাশিত সংখ্যার ধারে-পাশেও পৌঁছতে পারছে না কংগ্রেস। মুছে যাচ্ছে বহুজন সমাজ পার্টিও।
উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে বড় জয়ের আভাস মিলতেই দিল্লিতে উৎসব শুরু বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। ছবি: রয়টার্স।
উত্তরপ্রদেশের ভরাডুবি যদি কংগ্রেসের কাছে এখন কাটা ঘায়ের সমান হয়, লাগোয়া উত্তরাখণ্ডের ধাক্কা তা হলে সেই ঘায়ে নুনের ছিটের মতোই! বলছে রাজনৈতিক শিবির।