প্রিয়ঙ্কা এবং রাহুলকে নিয়ে তির্যক মন্তব্য বিজেপি বিধায়কের। —ফাইল চিত্র।
সক্রিয় রাজনীতিতে পা রাখার পর থেকেই বিজেপি-র আক্রমণের শিকার প্রিয়ঙ্কা বঢরা। কখনও বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী, কখনও বা বিহার মন্ত্রিসভার সদস্য— প্রিয়ঙ্কার দিকে ধেয়ে এসেছে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য। এ বার সেই তালিকায় যোগ হল উত্তরপ্রদেশের এক বিধায়কের নামও। বুধবার প্রিয়ঙ্কার পাশাপাশি রাহুল গাঁধীকে নিয়েও তির্যক মন্তব্য করেছেন তিনি।
উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলার বাইরিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিংহের মতে, রাহুল গাঁধী হলেন রাবণ এবং তাঁর শূর্পনখার চরিত্রে রয়েছেন রাহুলের বোন প্রিয়ঙ্কা। এই ‘নয়া রামায়ণে’ রামের ভূমিকায় কে অবতীর্ণ হয়েছেন? সুরেন্দ্রর মতে, তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
হঠাৎ সুরেন্দ্রর মুখে এই রামায়ণের প্রসঙ্গ কেন উঠে এল? তারও কারণ রয়েছে। ৩ ফেব্রুয়ারি পটনার গাঁধী ময়দানে একটি জনসভা করবেন রাহুল গাঁধী। সেই জনসভার প্রচারে ২৯ জানুয়ারি, মঙ্গলবার থেকেই থেকেই পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ পটনার নানা জায়গা। সেই পোস্টারে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীকে রাম হিসাবে দেখানো হয়েছে। পোস্টারের মাঝে লেখা রয়েছে, ‘ওঁদের রামনাম জপতে দাও, তুমি (রাহুল গাঁধী) নিজে রাম হয়েই থাকো।’ এর পরের দিনই রাহুলকে লক্ষ্য করে তির্যক মন্তব্য সুরেন্দ্রর। তিনি বলেন, “রাম-রাবণের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে রাবণকে বধ করার জন্য নিজের বোন শূর্পনখাকে পাঠিয়েছিলেন রাম। এমনটা মনে হচ্ছে যেন, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী রাবণের ভূমিকায় এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী রামের ভূমিকা পালন করবেন। আর তাই রাহুল নিজের বোন শূর্পনখাকে মাঠে নামিয়েছেন।” এতেই থেমে থাকেননি সুরেন্দ্র। মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের জয়কে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, “কংগ্রেস হল ডুবন্ত নৌকা। তফসিলি জাতি ও উপজাতি আইনের ফায়দা তুলেই রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে জিতেছে তারা। তবে অন্য কোথাও এ ধরনের সমর্থন পাবে না কংগ্রেস।” এমনকি, লোকসভা ভোটেও রাহুল গাঁধীর দল সাফল্য পাবে না বলে দাবি করেছেন তিনি। তবে এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
লোকসভা নির্বাচনের আগে সক্রিয় ভাবে রাজনীতিতে পা রেখেছেন প্রিয়ঙ্কা। এবং শুরুতেই উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যের পূর্বাঞ্চলের দায়িত্ব তাঁর হাতে সঁপে দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। এমনিতেই নোটবন্দি, কর্মসংস্থান, কৃষক আন্দোলন-সহ নানা ইস্যুতে কোণঠাসা নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি সরকার। এর পর প্রিয়ঙ্কার এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়োগের খবর এবং একই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে দায়িত্ব গ্রহণে বিরোধী শিবিরে যে হইচই শুরু হয়েছে, তা বিজেপি নেতাদের নানা মন্তব্যেই স্পষ্ট। কারণ, দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮০টি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। সেখানে ইতিমধ্যেই বিজেপি-কে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন মায়াবতী-অখিলেশ যাদব জুটি। আসন্ন ভোটে তাঁরা একজোট হয়ে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া, কংগ্রেসও ৮০টি আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। ফলে ২০১৪-র মতোই এ বারের লোকসভা ভোটেও উত্তরপ্রদেশ থেকে সাফল্যের ফসল ঘরে তুলতে মরিয়া বিজেপি-র।
আরও পড়ুন: ফেসবুকে রাহুলকে কটাক্ষ! ‘অম্বিকেশ’ হতে হল না এই শিক্ষককে
এর আগে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী প্রিয়ঙ্কাকে কলঙ্কিত স্বামীর জীবনসঙ্গী হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন। সেই বিতর্কিত মন্তব্যের পর বিহার মন্ত্রিসভার সদস্য তথা বিজেপি নেতা বিনোদ নারায়ণ ঝা-ও প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে কটূক্তি করেন। তিনি বলেছিলেন, “প্রিয়ঙ্কা সুন্দরী হলেও তাঁর কোনও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই।” এমনকি, প্রিয়ঙ্কার মধ্যে বুদ্ধিমত্তার কোনও ছাপই তিনি পান না বলেও কটাক্ষ ছিল বিনোদ নারায়ণের।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে ভারতে জুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা! ‘রিপোর্ট’ মার্কিন গুপ্তচর বাহিনীর
প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে করা নানা মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠলেও তা নিয়ে যে কোনও শিক্ষাই নেননি বিজেপি নেতারা, ফের যেন তা-ই প্রমাণ করলেন সুরেন্দ্র সিংহ।
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)