হায়দার আলি খান। ছবি: সংগৃহীত।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি তো বটেই, এনডিএ জোটসঙ্গীরাও উত্তরপ্রদেশে এক জনও মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করায়নি। কিন্তু এ যাত্রায় পরিস্থিতি ভিন্ন। ক্ষমতা ধরে রাখতে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে। এই আবহে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের রামপুর জেলায় সুয়ার আসন থেকে শরিক আপনা দলের (সোনেলাল) মুসলিম প্রার্থী হায়দার আলি খানকে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। মুসলিম অধ্যুষিত ওই আসনে হায়দারের মূল প্রতিপক্ষ হতে চলেছেন স্থানীয় সাংসদ তথা সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খানের ছেলে আবদুল্লা আজম। সম্প্রতি প্রতারণার মামলায় জেল থেকে জামিনে মুক্ত পেয়েছেন আবদুল্লা।
পাঁচ বছর আগে ছোট ছোট আঞ্চলিক দল, তফশিলি জাতি ও দলিতদের বৃহত্তর হিন্দুত্বের ছাতার তলায় এনে মেরুকরণের তাস খেলেছিলেন অমিত শাহেরা। যে কারণে গত বার উত্তরপ্রদেশের ৪০৩টি আসনের একটিতেও মুসলিম প্রার্থী দেয়নি বিজেপি ও তার জোট শরিকেরা। এ বারের পরিস্থিতি ভিন্ন। হিন্দুত্বের পরিবর্তে ফের জাতপাতের অঙ্কেই ভোটে বাজিমাৎ করতে চাইছে সব দল। সেই কারণে শরিক অনুপ্রিয়া পটেলের নেতৃত্বাধীন আপনা দলের সুয়ার আসন থেকে হায়দার আলি খানকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নিমরাজি হয়েও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তবে বিজেপি শিবিরের মতে, শরিক দলের টিকিট দেওয়া নিয়ে হস্তক্ষেপ করা না হলেও, দল এখন পর্যন্ত কোনও সংখ্যালঘু প্রার্থীকে বিজেপির টিকিট দিতে রাজি নয়। যদিও দলের সংখ্যালঘু শাখা এ যাত্রায় অন্তত কুড়িটি আসনে সংখ্যালঘুদের প্রার্থী করার জন্য দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে।
এ দিকে হায়দার খানকে প্রার্থী করা নিয়েও কম নাটক হয়নি। এ বারের ভোটে হায়দারের পিতা কাজিম আলি খানকে রামপুর ও পুত্র হায়দারকে সুয়ার কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু হায়দার দিল্লি এসে অনুপ্রিয়া পটেলের সঙ্গে বৈঠক করে কংগ্রেসের পরিবর্তে আপনা দল থেকে প্রার্থী হওয়ার
ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। অনুপ্রিয়া বিষয়টি জোটসঙ্গী বিজেপিকে জানালে আপনা দলের অনুরোধ মেনে নেন যোগী-অমিত শাহেরা। তারপরেই সুয়ার কেন্দ্র থেকে হায়দার আলি খানের নাম ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতি যা তাতে ওই কেন্দ্র থেকে হায়দারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চলেছেন সমাজবাদী নেতা আজম খানের পুত্র আবদুল্লা। পাঁচ বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনে আবদুল্লা সুয়ার আসন থেকে সমাজবাদী পার্টির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু বিধায়ক হওয়ার জন্য ন্যূনতম ২৫ বছর বয়স হওয়া প্রয়োজন। নির্বাচনের সময়ে বয়স ২৫ বছর না হওয়ায় আবদুল্লার জয়কে অবৈধ বলে ঘোষণা করে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। গত এক বছর প্রতারণা ও জালিয়াতির বিভিন্ন অভিযোগে জেলে আটক থাকার পরে সম্প্রতি জামিনে মুক্ত পেয়েছেন আবদুল্লা। তাঁকেই সম্ভবত সুয়ার কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করতে চলছে সমাজবাদী পার্টি। আবদুল্লার পিতা তথা সমাজবাদী পার্টির বিতর্কিত নেতা ও রামপুরের সাংসদ আজম খানও বিভিন্ন অভিযোগে গত এক বছর ধরে জেলে বন্দি রয়েছেন। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে প্রচার করার সুযোগ চেয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের কাছে অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করার প্রার্থনা করেছেন আজম খান।