প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সম্মিলিত অংশগ্রহণে যে সব যৌথ প্রকল্প চলে, তার মধ্যে বাছাই করা কিছু ক্ষেত্রে টাকা দেওয়ার নিয়ম বদলানোর কথা ভাবছে মোদী সরকার। কাজ শেষ হওয়ার পরে ফল দেখে তবেই বরাদ্দ টাকা রাজ্যকে দেওয়া হবে, এ বার এমন পথেই হাঁটতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রশাসনিক বা সরকারি কাজেও বারবার কেন্দ্রের শাসক দলের ‘রাজনৈতিক মনোভাব’ সামনে চলে আসছে বলে অভিযোগ করে এই নতুন শর্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছে এ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এর ফলে কাজের অসুবিধা হবে এবং উপভোক্তাদের কাছে সুবিধা পৌঁছতেও সমস্যা হবে, এমন আশঙ্কা বিরোধী দল সিপিএমেরও। বিজেপি অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই কেন্দ্রের পরিকল্পনাকে সমর্থন জানাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এ বারের বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, উন্নয়নের অর্থ ঠিকমতো খরচ করতে কিছু বাছাই করা প্রকল্পে অর্থ মঞ্জুরির পদ্ধতি পরীক্ষামূলক ভাবে বদলানো হবে। উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, বাড়ি বাড়ি নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্পে জলাধার নির্মাণ এবং বাড়ি পর্যন্ত জলের পাইপ গেলেই হবে না। জল বাড়িতে যাচ্ছে, তা জানার পরেই প্রকল্পের মূল অর্থ রাজ্যকে দেওয়া হবে। এই প্রেক্ষিতে রাজ্যের অর্থ দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘মুখে যা-ই বলা হোক, কেন্দ্রীয় সরকার এক এক রাজ্যের জন্য এক এক নিয়মে কাজ করে। এবং সে ক্ষেত্রে বারবার কেন্দ্রের শাসক দলের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। সরকার তো দলের নয়, দেশের মানুষের!’’ চন্দ্রিমা সোমবার আরও বলেছেন, ‘‘বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ ও অনুমোদনের ক্ষেত্রে অ-বিজেপি রাজ্য সরকারগুলির জন্য তারা যে পদক্ষেপ করছে, তা বিজেপি-শাসিত রাজ্যে করছে না।’’
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সিপিএমও। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘যৌথ প্রকল্পের কথা বলে শুরু হলে পরে অন্যান্য প্রকল্পেও এই পদ্ধতি চালু করতে পারে। এটা ঠিক পদ্ধতি নয়। পর্যাপ্ত টাকা না দিলে রাজ্য প্রকল্পের কাজ শুরু করবে এবং চালাবে কী করে? যাঁদের কাছে সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রকল্প, তাঁরাও সমস্যায় পড়তে পারেন। সুবিধা ঠিকমতো না পৌঁছলে বঞ্চিত হবেন মানুষই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তৃণমূলের শাসনে এ রাজ্যের মতো কোথাও কোথাও প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের বা ফেলে রাখার অভিযোগ আছে বলেই সেটা ব্যবহার করে কেন্দ্র এই রকম শর্ত দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে! তবে প্রকল্প ঠিক ভাবে চালানোর উপযুক্ত পদক্ষেপ এটা নয়। কোন দফায় কত টাকা দেওয়া হবে, তার অনুপাত রদবদল হতে পারে। কিন্তু কাজ শেষ করলে তবে টাকা দিলে সমস্যা তো বটেই।’’
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য পাল্টা বলছেন, ‘‘এত দিন তো আগে টাকা দিয়েছে কেন্দ্র! ফল কী হয়েছে? কত ঠিকাদারের টাকা বাকি! কত কাজ হয়নি! টাকা পড়ে আছে। কেন্দ্র তো ঠিকই কাজ করেছে। কেন শুধু শুধু টাকা ফেলে রাখবে? তার চেয়ে কাজ করে দেখাক, তার পরে পয়সা দেবে।’’