যোগী আদিত্যনাথ। ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক সপ্তাহ আগেই উত্তরপ্রদেশে গিয়ে যোগী আদিত্যনাথের প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘ইউপি প্লাস যোগী, বহুত হ্যায় উপযোগী।’
আজ মোদী সরকারের সংস্থা নীতি আয়োগ জানাল, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সূচকে দেশের মধ্যে সবথেকে শেষ সারিতে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। প্রধানমন্ত্রী নিজেই নীতি আয়োগের অধ্যক্ষ। বরাবরের মতোই কেরল প্রথম স্থানে।
উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের আগে যোগী আদিত্যনাথের কিছুটা মুখ রক্ষা করে নীতি আয়োগ অবশ্য জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশ অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় সবথেকে বেশি উন্নতি করেছে। তাতে অবশ্য সামগ্রিক ছবিতে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। কোন রাজ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের ছবি কেমন, তার বিভিন্ন মাপকাঠির ভিত্তিতে এই নিয়ে চতুর্থ বার নীতি আয়োগ স্বাস্থ্য সূচক তৈরি করল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির পরিস্থিতি নিয়ে নীতি আয়োগের বিভিন্ন রিপোর্টের মতো এই স্বাস্থ্য সূচকেও পশ্চিমবঙ্গ অংশ নেয়নি। ফলে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কোথায় রয়েছে, তা স্পষ্ট হয়নি। ২০১৯-২০-তে জন্মকালীন মৃত্যুর হার, শিশু মৃত্যুর হার, মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর হার, শিশুদের টিকাকরণ, আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার, হাসপাতালে প্রসবের হার, টিবি-র চিকিৎসায় সাফল্য, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে শূন্য পদের মতো একগুচ্ছ মাপকাঠি অনুযায়ী কেরলের পরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ু ও তেলঙ্গানা। আর শেষের দিকে উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে রয়েছে আরও দুই বিজেপি তথা এনডিএ শাসিত রাজ্য বিহার ও মধ্যপ্রদেশ।
সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের মন্তব্য, ‘‘এটাই উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের সত্যি রিপোর্ট। গোটা দুনিয়া জুড়ে মিথ্যে বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে সত্যিটা বদলানো যায় না। যারা উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্য বিগড়ে দিয়েছেন, তাদের জনতা ২০২২-এ জবাব দেবে।’’ অখিলেশ স্লোগান তুলেছেন, ‘ইউপি কহে আজ কা, নহিঁ চাহিয়ে ভাজপা’।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অবশ্য নীতি আয়োগের রিপোর্ট নিয়ে মন্তব্য করেননি। তাঁর সরকারের বক্তব্য, আগের কংগ্রেস, এসপি, বিএসপি-র অপশাসনের জেরেই উত্তরপ্রদেশ সামগ্রিক ভাবে পিছিয়ে রয়েছে। যোগী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে যে উন্নতি হয়েছে, তা নীতি আয়োগই জানিয়েছে। রিপোর্টেই বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯-এর তুলনায় ২০১৯-২০-তে সবথেকে বেশি উন্নতি করেছে উত্তরপ্রদেশ। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আজ এক জনসভায় বলেছেন, ‘‘বিকাশ, সুশাসন ও রাষ্ট্রবাদের ইস্যুতে শুধু বিজেপিই কাজ করতে পারে ও বিজেপি কাজ করে দেখাতে পারে। ”
যোগী যা-ই বলুন, বিধানসভা ভোটের আগে এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করে বিরোধীরা উত্তরপ্রদেশ সরকারের কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থতার ক্ষত উস্কে দিতে চাইছেন। যোগী সরকারের ব্যর্থতার জেরেই যে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে গঙ্গায় শব ভাসতে দেখা গিয়েছিল, তা মনে করিয়ে দিতে চাইছেন বিরোধীরা। কংগ্রেসের অভিযোগ, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে উত্তরপ্রদেশের কী হাল হয়েছিল, তা দেখার পরেও যোগী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জয়প্রতাপ সিংহ দাবি করেছেন, রাজ্যে অক্সিজেনের অভাবে এক জনেরও মৃত্যু হয়নি!
কেরলের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে যোগী সে রাজ্যে প্রচারে গিয়ে বাম সরকারকে এই স্বাস্থ্য নিয়েও নিশানা করেছিলেন। । আজ সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন সিপিএম নেতারা। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি পিনারাই বিজয়নের বাম সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘‘পাতা জোড়া মোদী-যোগীর ছবিওয়ালা বিজ্ঞাপন দিয়ে হাসি মুখে মিথ্যে প্রচার করা হবে। এই বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করা দরকার।’’