ভূমিপুত্রদের তীব্র বিক্ষোভের মুখে অ-অরুণাচলিদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট (পিআরসি) সংক্রান্ত বিলটি আপাতত প্রত্যাহার করে নিল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডুর এই ঘোষণার পরেও এখনও উত্তপ্ত অরুণাচল। গত রাতে পুলিশের গুলিতে জখম এক আন্দোলনকারীর আজ মৃত্যু হয়েছে। সেই খবরে আবার উত্তেজনা দেখা দেয়। পরিস্থিতি আয়ত্তে রাখতে ইটানগরে জারি করা হয়েছে নৈশ কার্ফু। চলছে সেনাবাহিনীর ফ্ল্যাগ মার্চ।
পিআরসি চালু করার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার থেকে ভূমিপুত্র জনজাতিদের ১৮টি সংগঠনের যৌথ মঞ্চের ডাকে ৪৮ ঘণ্টার বন্ধের পরেও সরকারের অনমনীয় মনোভাবে গত কাল রাত থেকে মারমুখী হয়ে ওঠে আন্দোলনকারীরা। বিধানসভা ও সচিবালয় ঘেরাও করা হয় পাশাপাশি চলে ভাঙচুর। প্রথম অরুণাচল ফিল্মোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বানচাল হয়ে যায়। গভীর রাত পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী-সহ মন্ত্রী, বিধায়করা ঘেরাওয়ে আটকে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রথমে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ব্যবহার করে। তাতেও পরিস্থিতি আয়ত্তে না আসায় শূন্যে গুলি ছোড়া হয়। পুলিশের গুলিতে এক বিক্ষোভকারী জখম হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ম্যাজিস্ট্রেট, সিআরপিএফের গাড়িতে আগুন লাগান হয়। সচিবালয়ের দরজা ভাঙার চেষ্টা হতে থাকে। আক্রমণের মুখে পড়েন সাংবাদিকরাও। সরকার মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়।
পিআরসি-র প্রতিবাদে রাজ্যে অনেক দিন ধরেই বিক্ষোভ দানা বাঁধছিল। কিন্তু তার পরেও সরকার দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে বসবাসকারী অ-অরুণাচলিদের পিআরসি দেওয়ার জন্য মন্ত্রী নাবাম রিবিয়ার নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়ে। তারা পিআরসি দেওয়ার সুপারিশ করে। আজ বিধানসভায় সেই রিপোর্ট পেশ করে প্রয়োজনীয় বিল আনারও কথা ছিল।
বিষয়টি নিয়ে নরম মনোভাব নেওয়ায় গতকাল ছাত্র সংগঠন আপসু ও নিসি ছাত্র সংগঠনের দফতরেও ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। প্রবল বিক্ষোভের মুখে বাধ্য হয়েই রাতে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, পিআরসি সংক্রান্ত বিষয় চলতি বিধানসভায় উত্থাপন করা হচ্ছে না। সরকারের এই ঘোষণার পরে রাত দেড়টা নাগাদ সচিবালয় ঘেরাও মুক্ত হয়। তবে পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত। সেনাবাহিনীর ডোগরা রেজিমেন্টকে ডাকা হয়েছে। তারা ফ্ল্যাগ মার্চ করছে।
রাজ্য সরকারের অভিযোগ, অরুণাচলে বিধানসভা ভোটের মুখে রাজনৈতিক উদ্দেশে পিআরসিকে সামনে রেখে রাজ্যে অশান্তি তৈরির চক্রান্ত চলছে। বিজেপির অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের মদত দেওয়ার পিছনে কংগ্রেস ও পেমা খান্ডু-বিরোধী বিজেপি নেতাদেরই একাংশ জড়িত। কংগ্রেস অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে পরিস্থিতির দায় রাজ্য সরকারের উপরেই চাপিয়েছে।