সফুরা জ়ারগার। —ফাইল চিত্র।
বিশ্ব-স্বীকৃত মানবাধিকারের নীতি অগ্রাহ্য করে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সফুরা জরগরকে আটক করে জেলে পোরার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ল সরকার। পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ ‘ডব্লিউজিএডি’ ওই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে অগ্রগতির উপরে নজর রাখতে তিন জনকে বিশেষ দায়িত্বও দিয়েছে তারা।
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, ২৭ বছর বয়সি সফুরাকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর প্রতিবাদ করা ও দিল্লির জাফরাবাদে হিংসার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছর এপ্রিলে বন্দি করা হয়েছিল। অভিযোগ আনা হয় সন্ত্রাস দমনের আইন ইউএপিএ-তে। জেলেও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা যখন প্রবল, এমন সময়ে অন্তঃসত্ত্বা সফুরাকে তিহাড় জেলে আটক রাখা নিয়ে বিস্তর প্রতিবাদ হয়েছিল। দিল্লি পুলিশ প্রথমে জামিনের বিরোধিতা করলেও পরে ‘মানবিক কারণে’ সেই অবস্থান থেকে সরে আসে। ২০২০-র ২৩ জুন জামিন পান সফুরা। যদিও শেষ পর্ষন্ত মানবতা-বিরোধী কাজের জন্যই কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় তুলল রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা। অভিযোগকারীর পরিচয় উল্লেখ না-করে মানবাধিকার পরিষদের ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, শুধু মানবাধিকারই লঙ্ঘিত হয়নি, সন্ত্রাস মোকাবিলার নামে সফুরার স্বাধীন মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ জমায়েতের অধিকারও হরণ করা হয়েছে। তাঁর বিষয়ে পদক্ষেপের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থাটিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সফুরা। তাঁর বক্তব্য, “আমি ভাগ্যবান ও কৃতজ্ঞ। আমার উপর যা হয়েছে, সেটা এক দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা। আশা করব, এতে ভবিষ্যতে সব মানবাধিকার সংগ্রামীর অবস্থার উন্নতি হবে এবং অবিলম্বে সব রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে।” সফুরার তথ্য জানতে চেয়ে ডব্লিউজিএডি ২০২০-র ২২ জুলাই কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিলেও বিদেশ মন্ত্রক তার কোনও জবাব দেয়নি। যদিও অবৈধ ভাবে আটক রাখার অন্য এক ঘটনায় ডব্লিউজিএডি-র সমালোচনার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এস জয়শঙ্করের মন্ত্রক গত মাসে বলেছে, ভারতে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা ও প্রথম শ্রেণির জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা বিষয়টি দেখছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে হয়তো রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদ বা ডব্লিউজিএডি মতের ভিত্তিতে নতুন করে কোনও পদক্ষেপ করার সম্ভাবনা কম। তবে মানবাধিকার প্রশ্নে রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে ভারতের বিরোধের ক্ষেত্রটি আরও প্রশস্ত হবে এতে।