স্পেডেক্সের উৎক্ষেপণের চিত্র। ছবি: সংগৃহীত।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র মুকুটে জুড়ল নতুন পালক। বুধবার ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, স্পেডেক্স মিশনের জন্য দুই কৃত্রিম উপগ্রহের ‘আনডকিং’ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে তারা। অত্যন্ত কঠিন এই পরীক্ষায় ইসরোর সাফল্য অর্জনকে ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসাবে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে ভবিষ্যতে মহাকাশযানগুলি আপনাআপনি নিজেকে ‘ডক’ করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে আর মহাকাশযানগুলিকে পৃথিবী থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে না, যা অদূর ভবিষ্যতে চন্দ্রযান-৪ এর মতো অভিযানগুলির ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে বলেই বিশ্বাস বিজ্ঞানীদের।
বুধবার ইসরো-র তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, স্পেডেক্স-এর ‘আনডকিং’ সফল হয়েছে। মিশনের সাফল্যের পর তার ধারাবাহিক বিবরণও সংক্ষেপে প্রকাশ করেছে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা। জানানো হয়েছে, গোটা প্রক্রিয়ায় প্রথমে কৃত্রিম উপগ্রহ ‘এসডিএক্স-২’কে বর্ধিত করা হয়েছিল। তার পর পরিকল্পনামাফিক ‘ক্যাপচার লিভার-৩’ খুলে দেওয়া হয়। ‘এসডিএক্স-২’র ক্যাপচার লিভারটিও বিচ্ছিন্ন করা হয়। শেষমেশ, হাত ছেড়ে পৃথক হয়ে যায়‘এসডিএক্স-১’ এবং ‘এসডিএক্স-২’!
গত ১৬ জানুয়ারি স্পেডেক্স মিশনের অধীনে দুই কৃত্রিম উপগ্রহ ‘এসডিএক্স’ ১ ও ২ মহাকাশে পরস্পরের হাত ধরিয়েছিল ইসরো। সেই হাতই ছাড়ল দু’মাস পর। সফল হয়েছিল ‘স্পেস ডকিং’ প্রক্রিয়া। চিন, রাশিয়া এবং আমেরিকার পর বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসাবে স্পেস ডকিংয়ে সাফল্য পেয়েছিল ভারত। সেই সাফল্যের পর ইসরোকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।
ইসরোর সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ। এটিকে ভারতের ভবিষ্যৎ মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি। জিতেন্দ্র বলেন, ‘‘স্পেডেক্স-এর সফল আনডকিং ভারতের আসন্ন মহাকাশ অভিযানগুলির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে ভারতের নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন তৈরি, চন্দ্রযান-৪ এবং গগনযানের মতো অভিযানও পড়ে।’’
এই স্পেস ডকিং কী? ইসরো বলছে, দু’টি কৃত্রিম উপগ্রহ— এসডিএক্স ১ (চেজ়ার) এবং ২ (টার্গেট) একই গতিবেগে একই দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার পর মহাকাশে (প্রায় ৪৭০ কিলোমিটার উচ্চতায়) একই বিন্দুতে একসঙ্গে পৌঁছে একত্রিত হয়েছিল। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার নামই স্পেস ডকিং। গত ৩০ ডিসেম্বর স্পেস ডকিংয়ের জন্য অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে পিএসএলভি-সি৬০ রকেট উৎক্ষেপণ করে ইসরো। ওই রকেটের প্রধান পেলোড হিসাবেই পাঠানো হয়েছিল এসডিএক্স ১ এবং ২-কে। এ ছাড়া, ২৪টি সেকেন্ডারি পেলোডও পাঠানো হয়েছিল। পিএসএলভি-সি৬০ মিশনের প্রধান জয়কুমার সে সময়েই জানিয়েছিলেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে নিজস্ব আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন স্থাপন করতে বদ্ধপরিকর ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। স্পেস ডকিং এবং আনডকিংয়ের সাফল্য সেই লক্ষ্যপূরণের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।