কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র।
১০০ দিনের কাজ ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পশ্চিমবঙ্গে যে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছিল, তা প্রমাণিত বলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দাবি করলেন। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার ১০০ দিনের কাজ ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে ‘অ্যাকশন টেকন রিপোর্ট’ পাঠিয়েছে। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক তা খতিয়ে দেখছে।’’ তার ভিত্তিতে টাকা চালু হবে বলে তিনি জানান।
লোকসভায় বাজেট অতিরিক্ত বরাদ্দ নিয়ে আলোচনায় তৃণমূল সাংসদেরা রাজ্যের বকেয়া নিয়ে সরব হন এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন। আজ জবাবি বক্তৃতায় এ নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়। তাঁদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বাগযুদ্ধ হয়। সে সময়ে স্পিকারের চেয়ার থেকে লোকসভা পরিচালনা করছিলেন তৃণমূলেরই সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার।
অর্থমন্ত্রী জানান, তথ্য বলছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ ২০১৬-১৭-তে চালু করার পরে ২৫,৭৯৮ কোটি টাকা পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। তারপরে ২০১৮-র আবাস যোজনার তালিকায় অযোগ্য ব্যক্তিদের ঢোকানো হয়, যোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে। প্রকল্পের নাম বদলে বাংলা আবাস যোজনা করা হয়। এ নিয়ে রাজ্য সরকারের ‘অ্যাকশন টেকন রিপোর্ট’ চাওয়া হয়েছে। তিনি এ-ও দাবি করেন, ১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হয় এবং তখন প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে
দুর্নীতি হয়েছে।
রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, ২০২২-এর মার্চ মাস থেকে পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রয়েছে। এই মুহূর্তে বকেয়া টাকার পরিমাণ ৫,৫৫৩ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পে বকেয়া টাকার পরিমাণ ৮,৪১২ কোটি টাকা। ফলে দুই প্রকল্প মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা পাওনা।
তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থমন্ত্রীকে বলেন, যদি কোথাও দুর্নীতি হয়ে থাকে, তা হলে সেখানে টাকা বন্ধ করা হোক। গোটা রাজ্যের টাকা বন্ধ কেন? এই দুই প্রকল্প-সহ রাজ্যের মোট ১ লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্রের থেকে বকেয়া রয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতি হয়েছে বলেই টাকা আটকানো হয়েছে। কারণ, যেখানে অনিয়ম হয়েছে, সেখান থেকে টাকা ফেরত নেওয়ার বদলে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা দেওয়া হয়েছে। এখন রাজ্যের মধ্যে কোন জেলায় অনিয়ম হচ্ছে, তা আমি কী ভাবে ঠিক করব?’’
সুদীপ বলেন, ‘‘যত দিন রাজ্যের টাকা আটকানো হবে, তত দিন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজনৈতিক লক্ষ্যও পূরণ হবে না। বিজেপি রাজ্যে রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে চাইছে। কিন্তু তা হবে না। যত বার নির্বাচন হবে, তত বার সাম্প্রতিক উপনির্বাচনের মতো ৬-০ ফলই হবে।’’ সীতারামন পাল্টা বলেন, ‘‘যদি এমনই হয়, তা হলে তৃণমূল সাংসদদের সমস্যা কেন? টাকা আটকে রাখলে তো তৃণমূলেরই লাভ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের জনতা দেখছেন, গরিবদের জন্য দেওয়া টাকা পার্টিকর্মীদের হাতে যাচ্ছে। তাই সমস্যা হচ্ছে। যেখানে দুর্নীতি হবে, সেখানে আমরা সঙ্গে থাকব না। গরিবদের টাকা গরিবরাই পাবেন। প্রধানমন্ত্রী মোদীর এমনই নির্দেশ।’’ রাজ্য সরকারকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার দুর্নীতি, অনিয়ম নিয়ে ব্যাখ্যা দিক। কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, দেখাক। কে আটকাচ্ছে!’’