সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। ছবি: ফেসবুক।
জাতীয় টেস্টিং এজেন্সি বা এনটিএ-তে যে গলদ রয়েছে, মেনে নিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। জানালেন, ‘ভুল’ সংশোধন এবং উন্নত পরিষেবার জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এনটিএ-র কাঠামো, পরীক্ষা আয়োজনের পদ্ধতি শুধরে নেওয়া হবে। ছাত্রছাত্রীদের কেন্দ্রের প্রতি আস্থা রাখতে অনুরোধ করেছেন তিনি। বুধবার নেট পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। সিবিআই এর তদন্ত করবে বলেও জানিয়েছিল কেন্দ্র। বৃহস্পতিবারই এই ঘটনায় এফআইআর করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা নিটে দুর্নীতির অভিযোগ এবং বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার প্রবেশিকা পরীক্ষা ইউজিসি নেট বাতিল করা প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী। সেখানেই তিনি জানান, পরীক্ষার আয়োজক সংস্থা এনটিএ-র কাঠামোগত এবং প্রক্রিয়াগত সংশোধন প্রয়োজন। তা নিশ্চিত করতে সরকার উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আইন, শিক্ষা, মনস্তত্ত্ব প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রের দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে সেই কমিটি তৈরি হবে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী এনটিএ-র শোধন করা হবে। শীঘ্রই তার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের সঙ্গে কোনও প্রকার আপস করবে না সরকার, জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘‘নিটে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে দোষীরা অবশ্যই শাস্তি পাবে। নেটের ক্ষেত্রেও বিষয়টি তা-ই। কাউকে কোনও অবস্থাতেই রেয়াত করা হবে না। আমি তার গ্যারান্টি দিচ্ছি। পরীক্ষা পদ্ধতির উপর বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমার।’’ নেট পরীক্ষার এক দিন পর তা বাতিল করে দেওয়া প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘পরীক্ষার পরের দিন বিকেল ৩টে নাগাদ আমরা জানতে পারি, ডার্ক নেটে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছিল পরীক্ষার আগেই। মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হয় এবং ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে তা মিলে যায়। এর পরেই আমরা পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। টেলিগ্রামের মতো অ্যাপগুলির উপর নজরদারি চালানো কঠিন। প্রশ্নফাঁসে সেই ধরনের অ্যাপই ব্যবহৃত হয়েছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে আমরা আপস করব না।’’
নিটের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে বিহার থেকে। সেখানে এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। জেরায় যিনি স্বীকার করেছেন, পরীক্ষার আগের দিন তিনি প্রশ্ন পেয়ে গিয়েছিলেন। তা মুখস্থ করে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। সে প্রসঙ্গে ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘‘বিহার পুলিশের সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা অনবরত যোগাযোগ রেখেছি। তারা তাদের মতো তদন্ত করছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, বহু পরীক্ষার্থী কঠোর পরিশ্রম করে নিট পাশ করেছেন। তাঁদের দিকটিও আমাদের ভেবে দেখা দরকার।’’
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘দু’টি বিষয় অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এর সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে রয়েছে। আমাকে এই সরকারের শিক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই যা কিছু গোলমাল, আমি তার নৈতিক দায়িত্ব নিচ্ছি। কিন্তু আমার অনুরোধ, এটা নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না। আমিও রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকছি। গণতন্ত্রের উপর আস্থা রাখছি। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ‘দুধ কা দুধ পানি কা পানি’ হয়ে যাবে।’’
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দেশ জুড়ে ইউজিসি নেট পরীক্ষা হয়। কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থী তাতে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু বুধবার রাতে সরকার জানিয়ে দেয়, পরীক্ষাটি বাতিল করা হচ্ছে। পরীক্ষার স্বচ্ছতা সংক্রান্ত গোলমাল ধরা পড়ায় এই সিদ্ধান্ত। দেশ জুড়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। বিরক্ত ছাত্রছাত্রীরাও। পরবর্তী পরীক্ষার দিন জানানো হবে বলে জানিয়েছে সরকার। একই ভাবে নিটের ফলপ্রকাশের পর তাতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ৬৭ জন ওই পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে একই পরীক্ষাকেন্দ্রের। বিহারে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ধরপাকড়ও শুরু হয়েছে। যদিও কাউন্সেলিংয়ে এখনই স্থগিতাদেশ দিচ্ছে না সুপ্রিম কোর্ট।