—প্রতীকী ছবি।
অতীতে যখনই সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ হয়েছে, তীব্র প্রতিবাদ, হট্টগোল, এমনকি, হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়তে পিছপা হয়নি আরজেডি, এসপি, বিএসপি-র মতো দলগুলি। একবাক্যে নাকচ করেছে বিল।
তবে আজ শর্তসাপেক্ষে ওই বিল ‘সমর্থনে’ এগিয়ে এসেছেন আরজেডির রাবড়ী দেবী, বিএসপির মায়াবতী কিংবা এসপি-র ডিম্পল যাদবেরা। তাঁদের দাবি, সংরক্ষণের মধ্যে ওবিসি, দলিত ও পিছিয়ে থাকা শ্রেণির মহিলাদের জন্য আলাদা করে সংরক্ষণ দিতে হবে সরকারকে। জাতভিত্তিক ওই দলগুলির যুক্তি, ওই সংরক্ষণ না দিলে তথাকথিত উচ্চবর্ণের শিক্ষিত মহিলাদের সঙ্গে ভোটের ময়দানের লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়বেন গাঁও-দেহাতের মহিলারা।
প্রসঙ্গত, অতীতে এসপি-আরজেডির মতো দলগুলি ওবিসি সমাজের মহিলাদের সংরক্ষণের দাবিতে সরব হয়ে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ ভেস্তে দিয়েছে। ঘটনাচক্রে, আজ যে বিলটি পেশ হয়, তাতেও এ বিষয়ে উচ্চবাচ্য নেই। যা নিয়ে সরব হয়েছে ওই দলগুলি। তবে আগের মতো অশান্তি করেনি। এবং ওই শর্ত মানা না হলে তারা কী করবে, সে সম্পর্কেও কিছু বলেনি।
১৯৯৮ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের আমলে লোকসভায় ওই বিল পেশ করেছিলেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী এম থাম্বিদুরাই। এসপি ও আরজেডি সাংসদদের ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ-হট্টগোলের মধ্যেই আরজেডি সাংসদ সুরেন্দ্র প্রসাদ যাদব তৎকালীন স্পিকার জি বালযোগীর হাত থেকে ওই বিল কেড়ে তা ছিঁড়ে ফেলেন। বাজপেয়ী ১৯৯৯ সালে ফের ক্ষমতায় এলেও ওই বিল পাশ করাতে পারেননি।
কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীর উদ্যোগে, ২০০৮ সালের ৬ মে রাজ্যসভায় ওই বিল পেশ করার চেষ্টা করেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী এইচ আর ভরদ্বাজ। সে দিন তৎকালীন নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী রেণুকা চৌধুরী-সহ একাধিক সাংসদ ভরদ্বাজকে ঘিরে থাকলেও, এসপি সাংসদ আবু আজমি আইনমন্ত্রীর হাত থেকে ওই বিলটি ছিনিয়ে নেন। কোনও ভাবে ওই বিল পেশ হয়। বিল যায় আইন মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দু’বছর বাদে ২০১০ সালে আলোচনায় বসে রাজ্যসভা। আলোচনার দ্বিতীয় দিনে ওই বিলের প্রতিবাদে রাজ্যসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান হামিদ আনসারির টেবিলে উঠে পড়েছিলেন এসপি’র নন্দ কিশোর যাদব ও কামাল আখতার। আরজেডি সাংসদ রাজনীতি প্রসাদ বিল ছিঁড়ে তা ছুড়ে দেন স্পিকারের দিকে।
আজ সে সব কিছু দেখা যায়নি। সংসদে ধারে ও ভারে বিজেপি যত শক্তিশালী হয়েছে, জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব হারিয়েছে এসপি-আরজেডিরা। তাই অশান্তি না করে শুধু শর্ত দিয়েছে ওই দলগুলি। একবাক্যে বিল নাকচ করেনি বা তা করার কথাও বলেনি। যে লালুপ্রসাদ এক সময়ে বলেছিলেন, তাঁর মৃতদেহের উপরে ওই বিল পাশ হবে, সেই লালু-পত্নী রাবড়ী আজ বলেন, ‘‘সংরক্ষণের মধ্যে সংরক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। মহিলারাও জাতিভেদের শিকার। মহিলা সমাজে যাঁরা বঞ্চিত, উপেক্ষিত, তাঁদের জন্য সংরক্ষণ প্রয়োজন। কারণ, অন্য শ্রেণির মহিলাদের তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্ম যখন
শিক্ষার মুখ দেখেছেন, তখন এঁদের প্রথম প্রজন্ম কেবল শিক্ষার আলোয় এসেছেন।’’
এক সময়ে মহিলা সংরক্ষণের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন মুলায়ম। তাঁর পুত্র অখিলেশ ও পুত্রবধূ ডিম্পলও সংরক্ষণের পক্ষে সওয়াল করে সংখ্যালঘু, দলিতদের মতো পিছিয়ে থাকা অংশের জন্য আলাদা সংরক্ষণের দাবি করেছেন। বিএসপি নেত্রী মায়াবতী ৩৩ শতাংশের পরিবর্তে মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের দাবি করেছেন। তিনিও মহিলা সংরক্ষণের প্রশ্নে ওবিসি, তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংখ্যা বেঁধে দেওয়ার জন্য সওয়াল করেন।
শর্তসাপেক্ষে হলেও গো-বলয়ের জাতভিত্তিক দলগুলির প্রকাশ্যে সমর্থন দেখে স্বস্তিতে বিজেপি। যেহেতু কংগ্রেস ও বামেদের ওই বিলের প্রতি সমর্থন রয়েছে, তাই ওই বিল সংসদের উভয় কক্ষে অনায়াসে পাশ হয়ে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে সংরক্ষণের মধ্যে ওবিসি তথা পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের প্রশ্নে রাবড়ী বা ডিম্পল যাদবেরা আজ পাশে পেয়েছেন বিজেপির ওবিসি নেত্রী উমা ভারতীকে। ওই নেত্রীর আক্ষেপ, ‘‘ওই বিলে ওবিসি মহিলাদের সংরক্ষণের বিষয়টি না থাকায় আমি হতাশ। ওবিসি মহিলাদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করলে তাঁদের বিজেপির প্রতি বিশ্বাস ভেঙে যাবে।’’ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আজ সকালে চিঠিও দিয়েছেন।