বৃন্দাবনী বস্ত্র ফেরাতে পারে লন্ডনের জাদুঘর

শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের স্মৃতিবিজড়িত বৃন্দাবনী বস্ত্র অসমে ফিরিয়ে আনতে চান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সেটি সংরক্ষিত রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০৩:৪০
Share:

বৃন্দাবনী বস্ত্র। —নিজস্ব চিত্র।

শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের স্মৃতিবিজড়িত বৃন্দাবনী বস্ত্র অসমে ফিরিয়ে আনতে চান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সেটি সংরক্ষিত রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মিউজিয়ামের কিউরেটর টমাস রিচার্ড ব্লারটন জানিয়েছেন, অসম তথা ভারত সরকার যদি ওই বস্ত্র সংরক্ষণ ও বিমার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেয়, তবেই তা তাঁদের হাতে তুলে দিতে পারে ব্রিটিশ মিউজিয়াম।

Advertisement

‘ফ্রেন্ডস অফ অসম অ্যান্ড সেভেন সিস্টার’ সংগঠনের সঞ্চালিকা রিনি কাকতির উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান ব্লারটন অসমে এসেছেন। তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাগুরু বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা প্রেক্ষাগৃহে বৃন্দাবনী বস্ত্র সম্পর্কে ভাষণ দেন তিনি। বিশদে জানান বস্ত্রের ইতিহাস।

ইতিহাস বলে, অসমের বৈষ্ণবগুরু শ্রীমন্ত শঙ্করদেব মৃত্যুর আগে কয়েক বছর কোচবিহারে কোচরাজ নরনারায়ণ ও তাঁর ভাই চিলারায়ের সঙ্গে ছিলেন। ১৫৬৭ সালে রাজা নরনারায়ণের অনুরোধে শঙ্করদেব ও তাঁর শিষ্য মাধবদেব ৬ মাসের পরিশ্রমে বরপেটার কারিগরদের দিয়ে বৃন্দাবন, কৃষ্ণলীলা, গোপ-গোপিনী, গো-পালন, গোকুল, মথুরা, দ্বারকা আর দশাবতারের ছবি ফুটিয়ে তোলেন একটি বস্ত্রখণ্ডে। বৃন্দাবন-চিত্রিত ওই বস্ত্রই ‘বৃন্দাবনী বস্ত্র’ নামে পরিচিত।

Advertisement

১৫৬৮ সালে কোচবিহারের মধুপুর (তৎকালীন ভেলাডেঙা) সত্রে ১১৯ বছর বয়সে শঙ্করদেবের মৃত্যু হয়। ১৫৮১ সালে চিলারায় ও তার তিন বছর পরে নরনারায়ণ মারা যান। কোচ রাজত্বও ভেঙে যায়। দু’বার বন্যায় বিধ্বস্ত হয় সত্র। ওই বস্ত্র সংরক্ষণের ক্ষমতা সত্রের ছিল না।

ব্লারটন জানান, কোনও ভাবে বৃন্দাবনী বস্ত্রখণ্ডগুলি কোচবিহার থেকে ভুটান হয়ে লামাদের সঙ্গে তিব্বত পৌঁছয়। দক্ষিণ তিব্বতের গোবসি মঠে সেগুলি সেলাই করে দেওয়ালে ঝোলানো হয়। পরে লর্ড কার্জনের নির্দেশে ১৯০৪ সালে কর্নেল ইয়ংহাজব্যান্ড তিব্বত অভিযানে গেলে তাঁর সঙ্গী হন রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের বন্ধু সাংবাদিক পার্সিভাল ল্যান্ডন। তিনিই বস্ত্রখণ্ডগুলি ইংল্যান্ডে নিয়ে যান। ১৯০৫ সালে সেগুলি ব্রিটিশ মিউজিয়াম ও ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের হাতে আসে। তিব্বত থেকে আনায় সেগুলি ‘তিব্বতি লাম্পা’ নামে জাদুঘরে রাখা হয়। ১৯৯২ সালে ব্রিটিশ গবেষকরা বুঝতে পারেন, বস্ত্রখণ্ডগুলি ভিন্নধর্মী বয়নশিল্পের ধারা বহন করছে। তাঁরাই জানান, সেগুলি শঙ্করদেবের হাতে তৈরি কোচবিহারের বৃন্দাবনী বস্ত্র। এর বেশ কিছু বছর আগে ভূপর্যটক জাঁ রিবো ও তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা রায় পনেরো থেকে বিশ শতকের বিভিন্ন প্রাচ্য বস্ত্রখণ্ড সংগ্রহ করেছিলেন। সেগুলি ১৯৯০ সালে তাঁরা প্যারিসের ‘মিউজি গুইমে’-তে দান করেন। তার মধ্যেও ছিল অসম থেকে আনা বস্ত্রখণ্ড।

ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের ভারতীয় বিভাগের কিউরেটর রোজমেরি ক্রিল গবেষণা করে দেখেন— কৃষ্ণাদেবীর আনা বস্ত্র, ও ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রাখা বস্ত্রের নকশা ও বয়নশৈলীতে মিল রয়েছে। তবে প্রচলিত মতে, ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ১২টি ধাপের রেশমে বোনা, ভাগবত পুরাণের দৃশ্যপট ফুটিয়ে তোলা ৯ 'মিটার দীর্ঘ বস্ত্রখণ্ডটিই ‘বৃন্দাবনী বস্ত্র’ নামে বেশি পরিচিত। এমন অন্তত ১৫টি বস্ত্রখণ্ড ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ইতালি, ফ্রান্স ও আমদাবাদের জাদুঘরে রাখা আছে।

দীর্ঘ দিন থেকেই ওই বস্ত্রখণ্ড অসমে ফিরিয়ে আনার দাবি উঠেছে। কিন্তু সরকার তা নিয়ে ব্যবস্থা নেয়নি। এ বার মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে উদ্যোগী হন। ব্লারটন জানান, যদি অসমে ওই বস্ত্রখণ্ডের বিজ্ঞানসম্মত সংরক্ষণ, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলে ওই বস্ত্রখণ্ড অসমতে ফিরিয়ে দিতে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের আপত্তি নেই। তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য মানবেন্দ্র ভুঁইঞা, শঙ্করদেব আসনের অধ্যাপক রণজিৎ দেব গোস্বামীরা জানান— এ ব্যাপারে তেজপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা নেবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement