—প্রতীকী ছবি।
আগাম কোনও সতর্কবার্তা আসেনি। নির্দেশ আসেনি নাগরিকত্বের প্রমাণ দাখিলেরও। অথচ হঠাৎ এই মর্মে বার্তা এসেছে যে, ‘ভারতে থাকার শর্ত পূরণ করতে না পারার কারণে ২০১৬ সালের আধার আইনের ২৮এ ধারা অনুযায়ী আপনার আধার নিষ্ক্রিয় করা হল’! সমাজমাধ্যমে এই নোটিস (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) তুলে ধরে অনেকেরই অভিযোগ, তা প্রাপকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে রাজ্যে। বিষয়টি নিয়ে আধার কর্তৃপক্ষের (ইউআইডিএআই) সূত্রেও খবর, এমন অভিযোগ নিয়ে আসা উদ্বিগ্ন মানুষের ফোন ও ভিড় ক্রমশ বাড়ছে কলকাতায় ইউআইডিএআইয়ের দফতর এবং রাঁচীর আঞ্চলিক অফিসে (পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত)। প্রশ্ন উঠছে, যে বিষয়টি ঘিরে এত বিভ্রান্তি, এত উদ্বেগ, তা সকলের সামনে কেন খোলসা করছেন না আধার কর্তৃপক্ষ কিংবা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক? কেনই বা এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু জানাচ্ছে না রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরও?
গোড়ায় এই নোটিস সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরে ওই লেটারহেড ও বয়ানকে প্রাথমিক ভাবে ভুয়ো বলে মনে হয়েছিল ইউআইডিএআই সূত্রের। কিন্তু এখন সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের সূত্রে ইঙ্গিত, ওই নোটিস পাঠানো হয়েছে আধার কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেই।
যদিও তার সিদ্ধান্ত ‘অন্যত্র’ হয়ে থাকতে পারে বলে ওই সূত্রের দাবি। ইঙ্গিত, আগামী সপ্তাহে বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে। তবে এখনও বিষয়টি নিয়ে এত গোপনীয়তা কেন, কার বা কাদের নির্দেশে এমন ‘ঢাক গুড়গুড়’, সেই বিষয়টি জানতে চেয়ে ইউআইডিএআইয়ের সদর দফতর ও রাঁচীর অফিসে যোগাযোগ করা হলেও শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
সংশ্লিষ্ট মহল ও প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বিষয়টি বছর খানেকের পুরনো। রাজ্যের অজ্ঞাত, তা-ও নয়। তাদের দাবি, ২৮এ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনও বিদেশির ভারতে থাকার ভিসার মেয়াদ শেষ হয় অথবা ভারতে তাঁর প্রবেশ বা বসবাস আইনি শর্ত পূরণ না করে, তা হলে তাঁর আধার নিষ্ক্রিয় হতে পারে। সূত্রের দাবি, দেশে এমন ‘বেআইনি ভাবে’ বসবাসকারী বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে বছর কয়েক আগে উদ্যোগী হয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। লক্ষের কাছাকাছি এমন নাগরিকের সন্ধান মিলেছে, যাঁদের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্বের বৈধ নথি নেই। সেই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের অংশীদারি যথেষ্ট। সূত্রের দাবি, সেই কারণেই ওই তালিকাভুক্তদের আধার নিষ্ক্রিয় করতে নির্দেশ দেয় মন্ত্রক। গত বছরে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে নাকি এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছিল মন্ত্রকের। সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় প্রাথমিক ভাবে শিবির করার কথা ছিল। কিন্তু রাজ্যের তরফে কার্যত সাড়া মেলেনি। তাই শিবিরও আর হয়নি।
এই প্রেক্ষিতে অনেকের প্রশ্ন, বিষয়টি সম্পর্কে যখন আধার কর্তৃপক্ষ, কেন্দ্র ও রাজ্য অবহিত, তখন সাধারণ মানুষের উদ্বেগ নিরসনে স্পষ্ট বার্তা নেই কেন? শুক্রবার এ নিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, সাড়া মেলেনি।
প্রশাসনিক মহলের একাংশের বক্তব্য, রাজ্যে যে শিবির করার কথা ছিল, তা হলে নাগরিকত্বের প্রমাণ দাখিলের আগাম সুযোগ মিলত। সে ক্ষেত্রে হয়তো আচমকা ও সরাসরি আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার ঘটনা এড়ানো যেত। কিন্তু প্রশ্ন সেখানেও। সাধারণত ইউআইডিএআইয়ের নিয়ম অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আওতাভুক্ত ‘ফরেন রেজিস্ট্রেশন অফিস’ কারও ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ না থাকার কথা জানালে, অভিযুক্তকে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক অফিসে ডেকে আগে তাঁর নাগরিকত্ব প্রমাণের নথি জমা দিতে বলা হয়। তিনি তা দিতে না পারলে তখন আধার নিষ্ক্রিয় করার প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ, এ বার সেই আগাম সুযোগ না দিয়ে সরাসরি এমন নোটিস পাঠানোয় বিভ্রান্তি বেড়েছে।
এ নিয়ে কলকাতা টেলিফোন ভবনে ইউআইডিএআইয়ের রাজ্য অফিস সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে নারাজ। নোটিসপ্রাপ্তেরা সেখানে যোগাযোগ করলে তাঁদের বক্তব্য সরকারি ভাবে জানাতে বলা হচ্ছে। তার পরে তা রাঁচীর আঞ্চলিক অফিসে পাঠানো হবে। প্রশ্ন উঠছে, অনুপ্রবেশকারী কেউ হোন বা না হোন, কেন আগে নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ পাবেন না তিনি? যাঁরা অনুপ্রবেশকারী নন, কেন সরকারি জাঁতাকলে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হবে তাঁদের? সরকারি ভর্তুকি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে আধার এত জরুরি, আগাম নোটিস ছাড়া ধোঁয়াশা রেখে তা এ ভাবে হঠাৎ নিষ্ক্রিয়ই বা করে দেওয়া হবে কেন?
স্পষ্ট সরকারি ঘোষণার আগে পর্যন্ত এই সমস্ত প্রশ্নই উত্তরহীন।