চলে গেলেন ‘সংস্কার’-এর ঔপন্যাসিক কন্নড় সাহিত্যিক উদুপি রাজাগোপালচার্য অনন্তমূর্তি। বয়স হয়েছিল ৮২। বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। বেঙ্গালুরুর মণিপাল হাসপাতালে কিডনির সমস্যা নিয়ে দশ দিন আগে ভর্তি হন। রোজ ডায়ালিসিস চলছিল তাঁর। সেই লড়াই থেমে গেল আজ।
ইউ আর অনন্তমূর্তি শুধু তাঁর উপন্যাসের জন্য নয়, পরিচিত তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্যও। যার জেরে অনেক সময়েই বিতর্কে জড়িয়েছে তাঁর নাম। এ বছর লোকসভা ভোটের আগে তিনি বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। তাঁর মতে, মোদী ক্ষমতায় এলে সভ্যতায় একটা বদল আসবে। “আমার মনে হয়, প্রশাসনের নামে কোনও জালিয়াত থাকলে ধীরে ধীরে আমরা হয়তো নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার, নাগরিক অধিকার হারিয়ে ফেলব। কিন্তু তার চেয়ে যেটা চিন্তার, এমন কেউ ক্ষমতায় থাকলে আমরা কাপুরুষে পরিণত হব।” তাঁর এই কথা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হওয়ায় তিনি অবশ্য পরে জানান, আবেগবশে ওই মন্তব্য করে ফেলেছেন, “ওটা বলা বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছে। ভারত ছাড়া আর কোথায়ই বা যাব আমি?” কিন্তু তাতে বিতর্ক থামেনি। বিজেপির অন্দরে এ নিয়ে সমালোচনা তো হয়েইছে। প্রশ্ন উঠেছে, মোদীর পক্ষে জনমত গড়ে উঠলে অনন্তমূর্তি কেন অসহনশীল মনোভাব দেখাবেন? যদিও আজ অনন্তমূর্তির প্রয়াণের খবরে শোক জ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি টুইটারে জানিয়েছেন, ‘শ্রী ইউ আর অনন্তমূর্তির প্রয়াণে কন্নড় সাহিত্যে বড় ক্ষতি। তাঁর পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা।’
প্রচলিত বিশ্বাসকে বরাবরই প্রশ্ন করেছে তাঁর সাহিত্যসৃষ্টি। ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর অন্যতম বিতর্কিত উপন্যাস ‘সংস্কার।’ তখনই উপন্যাসে ব্রাহ্মণ্যবাদ, কুসংস্কার এবং ভণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলায় সমালোচিত হন তিনি। কিন্তু ক্রমে সেটিই হয়ে ওঠে অনন্তমূর্তির সব চেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস। পরে যা নিয়ে সিনেমাও হয়েছে। কন্নড় সমান্তরাল সিনেমার ইতিহাসে সেই ছবি হয়ে ওঠে অন্যতম। জাতীয় পুরস্কারও পায়।
১৯৩২-এর ২১ ডিসেম্বর জন্মের পরে গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারেই বড় হয়ে ওঠেন অনন্তমূর্তি। তাঁর দাদু ছিলেন পুরোহিত। মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার আগে সংস্কৃত স্কুলে পাঠ নিতে হয়েছিল তাঁকে। তার পরে ইংরেজি সাহিত্যে ডক্টরেটের জন্য পাড়ি বার্মিংহামে। লেখার সুবাদে ১৯৯৪-এ পেয়েছেন জ্ঞানপীঠ পুরস্কার, ১৯৯৮-এ পদ্ম বিভূষণ। গত বছর ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কারের মনোনয়ন পাওয়ায় অনন্তমূর্তিকে চিনেছিল পশ্চিমী পাঠকও। দু’দশকেরও বেশি সময় ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে পড়িয়েছেন মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ে। লিখেছেন মোট পাঁচটি উপন্যাস, একটি নাটক, আটটি গল্প-সংগ্রহ, কবিতার তিনটি সংকলন এবং আটটি প্রবন্ধ।
লেখায় যেমন প্রশ্ন করেছেন চিরাচরিত নিয়মকে, জীবনেও তেমন। এক খ্রিস্টান মহিলাকে বিয়ে করতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। মৃত্যুর সময়ে পাশে ছিলেন তাঁর সেই স্ত্রী এস্থার এবং দুই সন্তান শরৎ-অনুরাধা।