হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের প্রতিনিধিদের প্রতিবাদ। —নিজস্ব চিত্র।
অসমে খ্রিস্টান স্কুলগুলি থেকে গির্জা, ক্রস ও যিশুর মূর্তি সরানো, ফাদার-সিস্টারদের সাদা বাতিল করার ফতোয়া জারি করল হিন্দুত্ববাদী দুটি সংগঠন। প্রতিবাদে ডিজিপি ও মুখ্য সচিবকে চিঠি পাঠালো অসম খ্রিস্টান ফোরাম। থানায় খবর দিল মিশনারি স্কুলগুলিও। সম্প্রতি শোণিতপুরের একটি মিশনারি স্কুলে এক ছাত্রকে ক্লাসের মধ্যে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দেওয়ায় শিক্ষক শাস্তি দিয়েছিলেন। সেই থেকেই এই ঘটনার সূত্রপাত।
কুটুম্ব সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি তথা প্রাক্তন বিজেপি নেতা সত্যরঞ্জন বরা গুয়াহাটির আর্চবিশপ ও শিক্ষামন্ত্রী রণোজ পেগুকে স্মারকপত্র পাঠিয়ে দাবি করেছেন, রাজ্যের খ্রিস্টান স্কুলগুলিতে অ-খ্রিস্টান শিক্ষার্থীদের হেনস্থা চলছে, স্কুলগুলিতে অসাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশের বদলে খ্রিস্টান ধর্মের উপাসনা-প্রচার-পাঠ চালানো হচ্ছে। তাদের আরও দাবি, সংবিধানের সমানাধিকার, বৈষম্যহীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতার শর্ত মানা হচ্ছে না খ্রিস্টান স্কুলগুলিতে, কারণ সেখানে স্কুলের মধ্যে রয়েছে গির্জা ও যিশুর মূর্তি, পড়ানো হচ্ছে বাইবেল, শেখানো হচ্ছে যিশুর গান, ফাদার-সিস্টাররা পরছেন সাদা পোশাক। এ দিকে, স্কুলের ভিতরে সরস্বতী পুজো করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও সাংবিধানিক সাম্যের পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে খ্রিস্টান স্কুলে যিশুর মূর্তি, ক্রস, উপাসনা গৃহ রাখা, ধর্মীয় পোশাক পরা, গান শেখানো অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলল তারা। একই দাবিতে গুয়াহাটি-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মিশনারি স্কুলের আশপাশের দেওয়ালে পোস্টার লাগিয়েছে সম্মিলীত সনাতন সমাজ। দুটি সংগঠনই ২২ ফেব্রুয়ারির সময় বেঁধে হুমকি দিয়েছিল, সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করা হলে গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সংখ্যালঘু হওয়ার সুযোগ নিয়ে ভারত বিরোধিতা, দেশের সনাতন সংস্কৃতি ধ্বংসের চেষ্টা ও খ্রিস্টধর্ম প্রচার মানা হবে না।
বিষয়টি নিয়ে অসমের ডিজিপি ও মুখ্য সচিবকে নালিশ জানালো অসম খ্রিস্টান ফোরাম। অসমের আর্চবিশপ রেভারেন্ড জন এম, অসম খ্রিস্টান ফোরামের সাধারণ সম্পাদক চোয়ারাম দৈমারি ও মুখপাত্র অ্যালেন ব্রুকস বলেন, বিভিন্ন স্থানে খ্রিস্টান স্কুল থেকে খ্রিস্টান প্রতীক সরিয়ে ফেলা, হিন্দু ধর্মাচরণ চালু করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। আমরা ওই দাবি মানছি না এবং এ নিয়ে সরকারকে যথোচিত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
অ্যালেনের মতে, “আমরা সংবিধান স্বীকৃত অধিকারের মধ্যে থেকেই যা করার করছি। রাজ্যের প্রথম স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল মিশনারিদের হাতেই তৈরি। অসমে শিক্ষাক্ষেত্রে এত বছর অবদান রাখার পরে হঠাৎ ২০২৪ সালে এসে স্কুলগুলি সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা, তাদের ধর্মান্তরিতকরণের কেন্দ্র হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হাস্যকর। তেমন হলে এত দিনে অসমের অর্ধের মানুষই খ্রিস্টান হয়ে যেতেন। ইচ্ছাকৃতভাবেই খ্রিস্টান স্কুলগুলিকে নিশানা করা হচ্ছে।”
তাঁর প্রশ্ন, স্কুলের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। যে সরকার আলফার পক্ষে কবিতা লেখার অপরাধে একটি ছাত্রীকে গ্রেফতার করে দুই মাস জেলে রাখতে পারে, সেই সরকার কেন এমন ঘৃণা ছড়ানো সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিষ্ক্রিয়?
ফোরাম জানিয়েছে, যখন ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের কোনও আপত্তি নেই, তখন কোনও ভুঁইফোঁড় সংগঠনের কথায় পাত্তা দেওয়ার প্রশ্ন নেই। সব মিশনারি স্কুলকে বিষয়টি স্থানীয় থানায় জানিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।
ডিজিপি জি পি সিংহ বলেন, রাজ্যে কোনও ধরণের বেআইনি কাজ, আইন হাতে তুলে নেওয়া বরদাস্ত করা হবে না। সব সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে।
এ দিকে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে মিশনারি স্কুলগুলি দাবি না মানায় ও সরকার ব্যবস্থা না নেওয়ায় হাই কোর্ট, প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা জানান সত্য। রবিবার তিনি বলেন, “যেহেতু সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, বৈষম্য ঘোচানো, দেশের সনাতন পরম্পরা বাঁচাতে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, তাই বিষয়টি নিয়ে জনস্বার্থ আবেদন জমা দেওয়া হবে। প্রশ্ন তোলা হবে, স্কুলের মধ্যে গির্জা থাকলে মন্দির বা মসজিদ কেন থাকতে পারবেন না?”