—ফাইল চিত্র।
যা ছিল এত দিন অভাবনীয়, তা-ই সম্ভব করে দিল নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের সিদ্ধান্ত! নয়া নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আজ, সোমবার একসঙ্গে ধর্নায় বসছেন কেরলের বাম-শাসিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও তাঁর মন্ত্রিসভা এবং বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিথালার নেতৃত্বে কংগ্রেস নেতারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা বা কারও স্মরণসভা ছাড়া রাজনৈতিক কারণে কেরলের মাটিতে সিপিএম এবং কংগ্রেসের হাত ধরা স্মরণযোগ্য কালের মধ্যে বেনজির ঘটনা।
তিরুঅনন্তপুরমে ‘রক্তসাক্ষী মণ্ডপম’ (শহিদ স্মারক)-এর সামনে আজ, সোমবার গোটা মন্ত্রিসভাকে সঙ্গে নিয়ে ‘সত্যাগ্রহ’ অবস্থানে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা চেন্নিথালা এবং কেরল প্রদেশ কংগ্রেসের অন্য নেতারাও থাকবেন সেই মঞ্চে। সিপিএমের নেতৃত্বধীন ফ্রন্ট এলডিএফ এবং কংগ্রেসের ফ্রন্ট ইউডিএফের সব শরিককে ওই ধর্না-অবস্থানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। একসঙ্গে প্রতিবাদে শামিল হওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন চেন্নিথালাই। দলে আলোচনা করে বিজয়ন সেই প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই কেরলে বিজয়নও জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) সংসদে পাশ হলেও তাঁদের রাজ্যে ওই আইন কার্যকর হতে দেবেন না। তার পরেই বিজয়নের সঙ্গে কথা বলেছিলেন চেন্নিথালা। তাঁর কথায়, ‘‘এই দানবীয় নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিবাদের জন্য আমার প্রস্তাবে মুখ্যমন্ত্রী রাজি হয়েছেন। এই অসাংবিধানিক আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।’’ সমাজের নানা অংশের প্রতিনিধি ও সাংস্কৃতিক জগতের ব্যক্তিত্বেরাও ধর্নায় যোগ দেবেন।
আরও পড়ুন: জনবিস্ফোরণ হতে পারে, ত্রিপুরায় চিন্তিত বাম
এর আগে বামেদের সমর্থনে কেন্দ্রে মনমোহন সিংহের ইউপিএ-১ সরকার হলেও কেরলে দু’পক্ষের সম্পর্ক অহি-নকুলই থেকেছে। এমনকি, বাংলায় সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করতে চাওয়ায় দলের অন্দরে সেই উদ্যোগের প্রবল বিরোধিতা করেছেন দক্ষিণী ওই রাজ্যের বাম নেতারা। এই প্রেক্ষিতে কংগ্রেসের আমন্ত্রণে বিজয়নদের সাড়া দেওয়ার ঘটনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। বিজয়নের বক্তব্য, ‘‘নাগরিকত্ব আইন সংবিধানে স্বীকৃত সমানাধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাকেই অগ্রাহ্য করেছে। ধর্মের নামে নাগরিকদের ভাগ করা হচ্ছে। সব নাগরিকই উদ্বিগ্ন। প্রতিবাদ-অবস্থান থেকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে, আমাদের রাজ্য এক সুরেই এই আইনের প্রতিবাদ করছে।’’
কেরলের ঘটনায় উৎসাহিত বাংলার কংগ্রেস ও বাম নেতারাও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের মন্তব্য, ‘‘বিজেপি দেশ ধ্বংস করে যে কাণ্ড শুরু করেছে, সেই বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে কেরলে কংগ্রেস ও বামের একমঞ্চে এসে যুদ্ধ ঘোষণাকে শুধু অভিনন্দনই জানাচ্ছি না, অনুপ্রাণিত বোধ করছি! বাংলায় যৌথ আন্দোলন শুরু করেছি, এর পরে সেই আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে।’’ কেরলে ‘সমমনোভাবাপন্ন’ সব দলের একমঞ্চে এসে প্রতিবাদকে স্বাগত জানিয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও।