সচিন পাইলট
ব্যবধান চার মাসের। মার্চে মধ্যপ্রদেশে প্রথমে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং পরে সেই সূত্রে সরকারে থাকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা খোয়ানোর পরে এ বার রাজস্থানে একই রকম সঙ্কটের মেঘ। ঘটনার কেন্দ্রে সেই প্রবীণ-নবীন সংঘাত।
মধ্যপ্রদেশে কমল নাথের সঙ্গে সম্পর্ক বিষিয়ে যাওয়ায় দল ছেড়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। এ বার রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের বিরুদ্ধে সনিয়া গাঁধীকে নালিশ জানাতে দিল্লি এসে হাজির উপ-মুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলট! সঙ্গী জনাকয়েক ঘনিষ্ঠ নেতা। গুরুগ্রামের রিসর্টে ঘাঁটি গেড়েছেন তাঁরা। সচিন কোথায়, তা স্পষ্ট নয়। শোনা যাচ্ছে, কংগ্রেস এবং নির্দল মিলিয়ে অন্তত ১৯ জনের সমর্থন রয়েছে তাঁর পিছনে। সচিনের দাবি ৩০।
সচিন ঘনিষ্ঠদের ক্ষোভ, কংগ্রেসকে কার্যত কাঁধে করে রাজস্থানে ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনেও মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি পাননি রাজেশ পাইলটের পুত্র। উল্টে তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছেন গহলৌত। সচিনের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে গহলৌতের পুলিশ তাঁকে নোটিস পাঠানোর পরে। তাই হেস্তনেস্ত চেয়ে গাঁধী পরিবারের দ্বারস্থ তিনি। শোনা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই তাঁর কথা হয়েছে আহমেদ পটেলের সঙ্গে। তবে সনিয়া বা রাহুলের সঙ্গে কথা হয়নি।
আরও পড়ুন: ভারতে টানাপড়েনের মধ্যে টিকার শেষ পর্যায়ে রাশিয়া
উল্টো দিকে গহলৌতের দাবি, দল ভাঙিয়ে তাঁর সরকার ফেলার চেষ্টা হচ্ছে রাজস্থানে। টাকার থলি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিজেপি। রাজস্থানের বিজেপি সভাপতি সতীশ পুনিয়ার পাল্টা দাবি, এ একেবারেই কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব। রবিবার রাত্রি ন’টায় দলের সমস্ত মন্ত্রী, বিধায়কদের বৈঠকে ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বৈঠকে সচিন অনুগত কয়েক জনও হাজির ছিলেন বলে খবর। কাজ সকাল ১০টায় পরিষদীয় দলের বৈঠক ডেকেছেন অশোক। তবে সচিন জানিয়েছেন, সেই বৈঠকে থাকবেন না তিনি।
কমল নাথের সঙ্গে হেস্তনেস্ত চেয়ে এ ভাবেই গাঁধী পরিবারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। অনেকে মনে করেন, তখন গাঁধী পরিবার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিলে এত তাড়াতাড়ি দলত্যাগের সিদ্ধান্ত না-ও নিতে পারতেন মাধব রাও সিন্ধিয়ার পুত্র। ফলে প্রশ্ন, এ বারও কি সেই ‘ভুল’ করবে তারা?
আরও পড়ুন: অ্যাপ তৈরির সরকারি উদ্যোগকে স্বাগত
রাজস্থানের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র নেতা অবিনাশ পাণ্ডের দাবি, “সরকার পড়ার সম্ভাবনা নেই।” উল্টো দিকে জ্যোতিরাদিত্যের টুইট, “প্রাক্তন সহকর্মী সচিন পায়লটকেও যে ভাবে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন, তা দেখে মর্মাহত। প্রতিভা, দক্ষতার মূল্য খুব কমই কংগ্রেসে।” ময়দান সামলাতে অবিনাশ, অজয় মাকেন এবং রণদীপ সুরজেওয়ালাকে জয়পুর পাঠাচ্ছে কংগ্রেস।
প্রশ্ন উঠছে, দলের প্রতি ক্ষোভে সচিনের কংগ্রেস ছাড়ার সম্ভাবনা কতটুকু? সচিন ঘনিষ্ঠদের দাবি, পারিবারিক ভাবে জ্যোতিরাদিত্যরা সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ। বিজয়া রাজে সিন্ধিয়া থেকে রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া— পরিবারের অনেকেই বিজেপি নেতৃত্বে। সেই ইতিহাস সচিনের নেই। একান্ত কংগ্রেস ছাড়তে বাধ্য হলে, রাজস্থানে নতুন আঞ্চলিক দল গড়ার সম্ভাবনাই তাঁর বেশি। কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের অবশ্য প্রশ্ন, “সব ঘোড়া বেরিয়ে যাওয়ার পরে কি আমরা আস্তাবলের কথা ভাবব?”
গত লোকসভা ভোটে যোধপুর থেকে গহলৌতের ছেলের টিকিট পাওয়া নিয়ে আপত্তি তোলেন সচিন। ছেলের হারের দায় সচিনের কাঁধে চাপান গহলৌত। এর পরে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, চেষ্টা হচ্ছে তাঁর সরকার ফেলার। তার তদন্তের জন্যই সচিনের বয়ান রেকর্ড করতে চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছিল পুলিশ।
রাজস্থান থেকে দুই রাজ্যসভা আসনে ভোটের আগে গহলৌত দল ভাঙানোর অভিযোগ তুললে, সচিনের দাবি ছিল, তা মনগড়া। কেউ দল ছাড়ছেন না। তিনি নিজেও যাচ্ছেন না বিজেপিতে। রাজ্যসভায় দু’টি আসনেই জেতেন কংগ্রেস প্রার্থী। সচিন এ বারও ‘কথা রাখেন কি না’, সে দিকেই তাকিয়ে রাজস্থানের রাজনীতি।
(এই প্রতিবেদনটি প্রথম বার প্রকাশিত হওয়ার সময় বিজেপি নেত্রী হিসেবে বিজয়া রাজে সিন্ধিয়ার পরিবর্তে ভুলক্রমে গায়ত্রী দেবীর নাম লেখা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।)