কয়েকটা ঘণ্টার এদিক-ওদিক।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসী সফর করছেন, শহর তখন উত্তাল বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বিক্ষোভে। যার জেরে এমনকী প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের পথও বদলাতে হল। প্রধানমন্ত্রী শহর ছাড়ার কিছু পরে, শনিবার বেশি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উপরে বেপরোয়া লাঠি চালাল রাজ্যের বিজেপি সরকারের পুলিশ।
রবিবার সকালে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে কিন্তু এ নিয়ে টুঁ শব্দটিও করলেন না প্রধানমন্ত্রী।
কেন?
এর উত্তর আজ নিজেই দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ দিন ‘মন কি বাত’ তিন বছর পূর্ণ করল। আর এ দিনই প্রধানমন্ত্রী বললেন, রেডিওর এই মাসিক অনুষ্ঠানে তিনি নিজের ‘মনের কথা’ বলেন না। দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা শোনান। বললেন, এই অনুষ্ঠান রাজনীতির থেকে দূরে রাখেন। যে বিষয় তাৎক্ষণিক উত্তাপ ছড়ায়, তাতে ভেসে যান না।
সত্যিই কি তা-ই?
বিরোধীদের বক্তব্য, রেডিও-র এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভূরি ভূরি রাজনীতির কথা শুনিয়েছেন। গোরক্ষকদের তাণ্ডবের মতো তাৎক্ষণিক রাজনীতি নিয়েও মন্তব্য করেছেন। আর আজও যে ভাবে স্বচ্ছতা অভিযান নিয়ে বলতে গিয়ে কাশ্মীরের বিলাল দারের চেষ্টায় উপত্যকার লেক সাফাইয়ের উদাহরণ দিলেন বা জয়প্রকাশ নারায়ণ-নানাজি দেশমুখ-দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মজয়ন্তীর কথা মনে করালেন, সর্দার পটেলের জন্মদিনে ‘ঐক্যের দৌড়’-এর কথা বললেন, ফের ২০২২ সালের স্বপ্ন দেখালেন— সেগুলি কি তাঁর রাজনীতি নয়?
আরও পড়ুন: বিলালের মনের কথায় মোদীর বিড়ম্বনা
মোদী আজ বলেন, ‘‘আমি ‘মন কি বাত’ করতে গিয়ে সব সময় মনে রাখি বিনোদা ভাবের একটি কথা। তিনি বলতেন, ‘অ-সরকারি আসরকারি’ (অর্থাৎ, অ-সরকারি ব্যবস্থাকে কার্যকর করা)। আমিও ‘মন কি বাত’-এ জনতাকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখার চেষ্টা করি। ভবিষ্যতে সমাজবিজ্ঞানী, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা নিশ্চয়ই এর ভাল-মন্দ পর্যালোচনা করবেন।’’
কংগ্রেসের মুখপাত্র অজয় কুমারের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী যেটিকে ‘অ-সরকারি’ বলছেন, সেগুলি সবই তাঁর রাজনীতির অঙ্গ। সাফাই অভিযানে জনতাকে অংশীদার করা বা খাদির পোশাক কিনতে বলা, সবই তাঁর ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোর লক্ষ্যে। অথচ এই খাদির ক্যালেন্ডারেই মহাত্মা গাঁধীকে সরিয়ে মোদী নিজের ছবি ব্যবহার করেছেন! যেটিকে তিনি ‘অ-সরকারি’ নাম দেন, সেটিই পরে সরকারি প্রকল্পের অধীনে চলে আসে! মোদী বলছেনও সরকারি মাধ্যমে। অর্থাৎ রাজনীতি না টানার অভিযোগ ধোপেই টেকে না।
কংগ্রেসের অভিযোগ, আসলে মোদী সেই সব বিষয় এড়িয়ে যান, যেগুলো তাঁর এবং তাঁর দলের কাছে অস্বস্তিকর। তাই বেকারি, কৃষক আত্মহত্যা, মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গই তোলেন না। শুধু তা-ই নয়। গত তিন বছর ধরে শুধু একতরফা বলে গেছেন, কোনও প্রশ্ন শোনেনইনি। তিন বছরে একটিও সাংবাদিক বৈঠক করেননি। মুখে যা-ই বলুন, মোদী আসলে জনতার নয়, নিজেরই ‘মনের কথা’ বলেন।