ত্রিপুরায় প্রচারে তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
বামেদের ২৫ বছরের জমানার তুলনায় বিজেপির পাঁচ বছরে বেশি সর্বনাশ হয়েছে! বলে দিলেন সরাসরিই। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে ত্রিপুরার বিপ্লব দেব-মানিক সাহার সরকারের রিপোর্ট কার্ড পাশাপাশি রেখে বিতর্কের জন্য চ্যালেঞ্জ করলেন বিজেপিকে। বললেন, ‘‘যদি ল্যাজে-গোবরে করে বিজেপিকে ময়দানছাড়া করতে না পারি, ত্রিপুরার মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে চলে যাব!’’
দ্বিতীয় দফার প্রচারে এই মেজাজেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখল ত্রিপুরা। প্রথম দফায় আজ, শনিবার ত্রিপুরায় ভোটের প্রচারে আসার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। আবার তাঁর আসার কথা সোমবার। সূত্রের খবর, মোদীর ওই সভার দিনই ফের এই রাজ্যে ময়দানে দেখা যেতে পারে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে।
কমলপুর ও কদমতলায় দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে শুক্রবার জোড়া কর্মসূচি ছিল অভিষেকের। কমলপুরের সভায় তিনি বলেন, ‘‘বামেরা ২৫ বছরে এই রাজ্যের মাটির যা ক্ষতি করেছে, পাঁচ বছরে তার চেয়ে বেশি সর্বনাশ করেছে বিজেপি! এদের পাল্টে দিন, দেখবেন অনেক সমস্যা মিটে গিয়েছে। বাংলায় বিজেপি হেরেছে বলে ত্রিপুরায় পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমিয়ে দিয়েছিল!’’ অভিষেক এ দিন ব্যাখ্যা করেছেন, সুযোগ পেলে তবে কাজ করে দেখাবেন— এ কথা তাঁরা বলছেন না। তাঁরা বরং বলছেন, বাংলায় যা কাজ হয়েছে, সে দিকে এক বার দেখে নিয়ে ত্রিপুরার মানুষ ভোট দিন। সেই সূত্রেই অভিষেকের চ্যালেঞ্জ, ‘‘বিজেপির প্রতিশ্রুতি আর পাঁচ বছরের কাজের রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসুন। আমাকে বলুন, বাংলায় সরকারের কাজের রিপোর্ট কার্ড নিয়ে কোথায় আসতে হবে। এক ঘণ্টায় পৌঁছে যাব! দেখিয়ে দেব, বাংলায় কী হয়েছে আর এখানে বিজেপি কী করেছে।’’
কমলপুরে সভা করতে বিজেপি বাধা দিয়েছিল বলে অভিযোগ করে অভিষেকের প্রশ্ন, ‘‘এত ভয় কেন?’’ এলাকার মানুষের একাংশ তাঁর কাছে অভিযোগ জানান, কী ভাবে তাঁদের ভয় দেখানো হচ্ছে, পরিষেবায় বঞ্চনা করা হচ্ছে। অভিষেক বলেন, আক্রমণের মুখেও তৃণমূলের লোকজন পালিয়ে যাননি। তাঁরা মানুষের পাশে থেকেই লড়াই চালাবেন। কলকাতায় মায়ের পারলৌকিক কাজের জন্য ত্রিপুরার দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূলের নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন অভিষেকের সভায় থাকতে পারেননি। রাজীবের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের সম্মতি নেওয়ার পরেও বিজেপির চাপে দু’টি জায়গায় সভা বাতিল করে তৃতীয় জায়গায় সমাবেশ করতে হয়েছে। এমনই হাল গণতন্ত্রের!
ভোটের প্রচারে ত্রিপুরায় রয়েছেন বঙ্গ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। পানিসাগরে সভার পরে তাঁর অবশ্য মন্তব্য, ‘‘বিজেপির সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই অভিষেকদের এখানে নানা কথা বলতে হচ্ছে। সে সব নিয়ে ভেবে কী হবে?’’
একই সুর সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিরও। অন্য দিকে, ত্রিপুরা বিজেপির মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘কয়লায় মুখ কালো হয়ে গিয়েছে, আগামী দিনে জেলে বসেই সভা করতে হবে মনে হচ্ছে! এখানে এসে বামেদের মন গলানোর চেষ্টা করেছেন। তবে ত্রিপুরার মানুষ তৃণমূলকে কী ভাবে দেখেন, সেটা তো পুরভোটের পরেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে!’’