শম্ভু সীমানায় কৃষকদের দিকে ছোড়া হচ্ছে কাঁদানে গ্যাস। —ফাইল চিত্র ।
পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের পর কৃষক আন্দোলনের আঁচ পৌঁছে গেল ত্রিপুরাতেও। পঞ্জাব-হরিয়ানা শম্ভু সীমান্তে বিক্ষোভরত কৃষকদের উপর কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার প্রতিবাদে আন্দোলনে নামল ত্রিপুরার কয়েকটি কৃষক সংগঠন। ত্রিপুরার সংযুক্ত ইউনাইটেড কিসান মোর্চা এবং ‘সেন্টার অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন (সিটু)’-এর ত্রিপুরা ইউনিট শুক্রবার বিভিন্ন সীমানায় কৃষকদের উপর হওয়া ‘পুলিশি অত্যাচারের’ বিরুদ্ধে আগরতলার রাস্তায় নামে। দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ডাকও দিয়েছেন ত্রিপুরার কৃষক সংগঠনগুলির একাংশ। উল্লেখ্য, মঙ্গল, বুধ এবং বৃহস্পতির পর শুক্রবারও শম্ভু সীমানায় কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।
পঞ্জাব-হরিয়ানার শম্ভু সীমানায় বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় শুক্রবার আন্দোলনকারী এক কৃষকের মৃত্যু হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত ওই কৃষকের নাম জ্ঞান সিংহ (৬৩)। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন জ্ঞান। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শুক্রবার শম্ভু সীমানায় মৃত্যু হয়েছে এক পুলিশ আধিকারিকেরও। তাঁর নাম হীরালাল (৫২)। হরিয়ানায় রেল পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। কৃষক বিক্ষোভের আবহে তাঁকে শম্ভু সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছিল। সেখানেই শুক্রবার তাঁর শরীর খারাপ হয়। তড়িঘড়ি অম্বালার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
কৃষক আন্দোলনের জেরে বিগত চার দিন ধরে উত্তাল পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানা। দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে পঞ্জাব-হরিয়ানার শম্ভু সীমানা। শম্ভু সীমানার পর নিরাপত্তা আঁটসাঁট করতে হরিয়ানার দাতা সিংহওয়ালা-খানাউরি সীমানাও বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে দিল্লির সীমানাগুলিতেও। শম্ভু সীমানায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাথর ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে কৃষকদের বিরুদ্ধে। পুলিশও পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। লাঠিচার্জও করা হয়। এর প্রতিবাদে শুক্রবার ‘ভারত বন্ধ’-এর ডাক দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। বৃহস্পতিবার পঞ্জাবে রেল অবরোধ করা হয়। কৃষকরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কাঁদানে গ্যাস ছোড়া বন্ধ না করলে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না তাঁরা।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের কাছে নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা পৌঁছে দিতে মঙ্গলবার ‘দিল্লি চলো’ যাত্রা শুরু করেছেন কৃষকরা। উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব এবং হরিয়ানা— মূলত এই তিন রাজ্যের কৃষকেরাই এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিনশোটি কৃষক সংগঠন। কৃষকদের দাবি, ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে। একই সঙ্গে সমস্ত কৃষিঋণ মকুব করতে হবে। স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাব মেনে ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্য দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। ২০২০-২১ সালের প্রতিবাদে কৃষকদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা খারিজের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সেই আন্দোলনেই এ বার শামিল হলেন ত্রিপুরার কৃষক সংগঠনের একাংশ।