ভাতের পাতে শিশুদের আনাজ তুলে দেন দিদিমণি

ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভলপমেন্ট সার্ভিসেস (আইসিডিএস)-এর এই প্রকল্পের মাধ্যমে ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের পুষ্টিকর খাবার এবং স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখার কথা।

Advertisement

বাপি রায়চৌধুরী

আগরতলা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:২৯
Share:

শিশুদের নিয়ে কলাগাছ পরিদর্শন করছেন বর্ণালী। —নিজস্ব চিত্র

অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিশুদের পুষ্টিকর খাবারের জন্যে সরকারের যা বরাদ্দ তাতে কুলোয় না। ২৩ পয়সায় কী আনাজের ব্যবস্থা করবেন তিনি—এই ভাবতে ভাবতেই একদিন ‘দিদিমণি’ বর্ণালী ভট্টাচার্য গ্রামের মানুষের দ্বারস্থ হন। সকলেই আনাজের চাষ করেন। কোনও গৃহস্থ বাস্তু সংলগ্ন জমিতেই ফলান আনাজ। দিদিমণি আর্জি জানান, সকলে অল্প অল্প দিন। তা দিয়েই শিশুদের মুখে ভাতের সঙ্গে আনাজের তরকারি তুলে দিতে পারবেন তিনি। সামান্য চাহিদা। আর শিশুরাও তো তাঁদেরই বাড়ির ছেলেমেয়ে। রাজি হয়ে যান গ্রামবাসীরা।

Advertisement

ত্রিপুরার ধলাই জেলার হারেরখোলা অঙ্গনওয়াড়ি এ ভাবেই চালাচ্ছিলেন দিদিমণি। একদিন তাঁর মনে হল, এ কি একেবারেই ভিক্ষা হয়ে যাচ্ছে! বছর দুয়েক পরে তিনি আবার দ্বারে দ্বারে। দিদিমণি আর্জি জানান, ‘‘তোমাদেরই জমির কোণে কোণে আমাদেরই কয়েকটা করে গাছ লাগাতে দাও। তার আনাজেই আমাদের চলে যাবে।’’ এ বারও রাজি গ্রামবাসীরা। অঙ্গনওয়াড়ির ২৩টি শিশুকে নিয়েই বিভিন্ন জমির এক চিলতে জায়গায় লাগিয়ে ফেলেন কুমরো, লাউ, সিম, বেগুন, টম্যাটো, কাঁচালঙ্কা, পেঁপে, কলা প্রভৃতি। ক’মাস যেতেই তাতে ফলন শুরু। অঙ্গনওয়াড়ির শিশুদের মুখেও হাসি, তাদেরর আনাজেই পেট ভরছে তাদের।

বর্ণালীদেবীর কথায়, ‘‘শিশুদের নিয়ে গিয়ে গাছ চেনাই। আনাজ তুলি। ওদের মুখের হাসি দেখে গ্রামবাসীরাও খুব খুশি। এখন প্রতিদিন আমাদের সেন্টারে প্রয়োজন মতো আনাজ আসে। ভাতের সঙ্গে শাকপাতা, আনাজ না খেলে কী শক্তি বাড়ে!’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ওয়াক আউট বিজেপির, আস্থাভোটে জয়ী উদ্ধব সরকার

ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভলপমেন্ট সার্ভিসেস (আইসিডিএস)-এর এই প্রকল্পের মাধ্যমে ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের পুষ্টিকর খাবার এবং স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখার কথা। কিন্তু শিশুদের খাবারের জন্যে সবজির জন্য বরাদ্দ শিশু প্রতি মাত্র ২৩ পয়সা। তাও আবার সপ্তাহের মধ্যে চারদিন, বাকি দু’দিন ডিম থাকে বলে সেদিনগুলিতে তরিতরকারির জন্য কোনও বরাদ্দ থাকে না। এই নিয়ে সমস্যায় রাজ্যের সব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে।

শুধু ভাতের পাতে আনাজই নয়, ফলের ব্যবস্থাও করেছেন বর্ণালীদেবী। এলাকারই প্রয়াত রবীন্দ্র শীল বাড়িতে দু’টি পেয়ারা গাছ রয়েছে। ভাল পেয়ারা হয়। দিদিমণির কথায়, ‘‘একদিন তাঁর স্ত্রীকে গিয়ে বললাম, একটি গাছের পেয়ারা আমাদের কেন্দ্রের শিশুদের জন্য দিন না! গৃহকর্ত্রী এক কথায় রাজি।’’ তেমন ভাবেই ব্যবস্থা হয়েছে পাকা পেঁপের, পাকা কলারও।

তাঁর এই অভিনব পন্থা ও আন্তরিকতার স্বীকৃতি পেয়েছেন দিদিমণি। গত ২৩ অগস্ট দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বর্ণালীদেবীর হাতে ‘জাতীয় পোষণ অভিযান’ পুরস্কার তুলে দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement