আহত তৃণমূলপ্রার্থী তপনকুমার বিশ্বাসকে নিয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুবল ভৌমিক। —নিজস্ব চিত্র।
পুরভোটের নামে ‘প্রহসন’ হয়েছে বলে তাদের। সেই ভোটের ফল থেকে প্রত্যাশা করার মতোও কিছু নেই। আপাতত ভরসা সুপ্রিম কোর্ট। তবে শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক, ত্রিপুরায় আগামী বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এখন জমি না ছাড়াই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
সন্ত্রাস, বেনিয়ম ও ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে পুরভোট বাতিলের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে তৃণমূল। সর্বোচ্চ আদালতে একই আবেদন জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল সিপিএমও। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের উপরে তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পাশাপাশিই সিপিএমের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টে মামলা করলেও আদালতের ভরসায় তারা বসে নেই। সর্বোচ্চ আদালতে তাদের আবেদনের পরবর্তী শুনানি আগামী ২ ডিসেম্বর। তার আগে কাল, রবিবারই ত্রিপুরায় পুরভোটের ফল বেরিয়ে যাবে। বিজেপির রাজত্বে গণতন্ত্র কী ভাবে লুঠ হচ্ছে, রাজনৈতিক ভাবে সেই প্রচারই তুলে ধরার কথা বলছেন সিপিএম নেতৃত্ব। একই লক্ষ্য তৃণমূলেরও।
পুরভোটের কিছু প্রার্থী ও দলীয় নেতাদের নিয়ে শুক্রবার আগরতলায় বৈঠক করেছেন তৃণমূলের নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবল ভৌমিকেরা। ভোটের দিন কী ভাবে হামলা হয়েছে, বিরোধী দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের অনেকে কী ভাবে বাধার মুখে পড়েছেন, বৈঠকে তার বিবরণ দিয়েছেন প্রার্থীরা। সূত্রের খবর, কলকাতায় পুরভোটের কর্মসূচি সামলে ত্রিপুরায় সভা করতে আসতে পারেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কলকাতায় ফিরে যাওয়ার আগে রাজীব বলেছেন, ‘‘ভোটের নামে যা হয়েছে, তা প্রহসনের চেয়েও খারাপ। বিজেপি বলছে, মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিয়েছেন। আমরা চ্যালেঞ্জ করছি, কারা শান্তিতে ভোট দিয়েছেন, কাদের হাতে ভোটের কালি রয়েছে, মিডিয়ার সামনে এনে দেখানো হোক!’’
বিজেপির ‘স্বৈরতান্ত্রিক রাজত্ব’ অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে তৃণমূলের লড়াই চলবে বলে রাজীব জানান। পুরভোটের দিন হামলায় চোখে গুরুতর চোট পাওয়া তৃণমূল প্রার্থী তপন কুমার বিশ্বাসকে চিকিৎসার জন্য সঙ্গে করে কলকাতা নিয়ে গিয়েছেন রাজীব। ত্রিপুরার পুরভোটে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেরও দ্বারস্থ হয়েছে তৃণমূল।
পুরভোটের পরে এ দিন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক বসেছিল ত্রিপুরা সিপিএমেরও। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পরবর্তী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুর নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে বড় অংশের ‘জল’ আছে বলে অভিযোগ করলেও ত্রিপুরা সিপিএম নেতৃত্বের মত, সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোট দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা দেখা গিয়েছে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও অধুনা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের কথায়, ‘‘মানুষের কাছে আমরা আবেদন করেছিলাম, এখানে ছোট অংশের ভোট। কিন্তু আপনারা কী করবেন, সেই দিকে অনেক বড় অংশের মানুষ তাকিয়ে থাকবেন। এই আবেদনটা কিছুটা কাজ করেছে, মানুষ চেষ্টা করেছেন।’’ মানিকবাবুর মতে, ‘স্বৈরাচারী’ শাসন গোটা দেশের বিপদ এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জরুরি। ত্রিপুরায় ‘গণতন্ত্র-হত্যার’ প্রতিবাদ করেছে সিপিএমের পলিটবুরোও। পুরভোটে আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের ঘর গুছিয়ে নতুন উদ্যমে লড়াইয়ের বার্তাও দিচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
বিজেপি অবশ্য অনায়াস জয়ে ‘আত্মপ্রত্যয়ী’। দলের নেতা দীপক মজুমদার এ দিন বলেন, ‘‘কংগ্রেসে যখন ছিলাম, বামফ্রন্ট জমানায় ভোটে এজেন্ট দিতাম। এখনও আমরা চেয়েছিলাম, বিরোধীদের এজেন্ট থাকুক। তা হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভাল হয়। কিন্তু ওদের লোক না থাকলে কী করা যাবে!’’ দীপকবাবুর দাবি, ক্ষমতা হারিয়ে সিপিএমের হাল শোচনীয়। তবু তাদের কিছু ‘পকেট’ আছে। কিন্তু তৃণমূল এখানে লড়ছে ‘কলকাতার নেতা ও মিডিয়ার’ ভরসায়! সূত্রের খবর, বিজেপি আগরতলা পুর নিগমে ক্ষমতায় এলে মেয়র-পদের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দীপকই।