রঙিন ক্যানভ্যাস থেকে অকালে মুছে গেল ‘মধুর স্মৃতি’

সালটা ১৯৯৮। বদোদরার কাছে সমস্ত মাপকাঠিতেই মুম্বইয়ের বিশালতা অনেক। সেই বিশালত্বের কাছেই নিজেকে সঁপে দিতে চেয়েছিল ২৬ বছরের তরুণী হেমা। বদোদরার মহারাজা সায়াজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলা বিভাগ থেকে সদ্য পাশ করেছেন। সহপাঠী-শিল্পী চিন্তন উপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয়েই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৯:৫০
Share:

শিল্পকে ভালবেসেছিল মেয়েটা। আর তার হাত ধরেই বদোদরা থেকে সোজা মুম্বই পাড়ি দিয়েছিল সে।

Advertisement

সালটা ১৯৯৮। বদোদরার কাছে সমস্ত মাপকাঠিতেই মুম্বইয়ের বিশালতা অনেক। সেই বিশালত্বের কাছেই নিজেকে সঁপে দিতে চেয়েছিল ২৬ বছরের তরুণী হেমা। বদোদরার মহারাজা সায়াজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলা বিভাগ থেকে সদ্য পাশ করেছেন। সহপাঠী-শিল্পী চিন্তন উপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয়েই। পড়তে পড়তে পরিচয়, তার পর প্রেম। সেই প্রেমই গড়ায় পরিণয়ে। তার পরে নব দম্পতির মুম্বই পাড়ি। দু’জনের চোখেই রাশি রাশি স্বপ্ন। শিল্পী সত্ত্বার বিস্তারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন চিন্তন-হেমা জুটি।

হেমা একটু অন্য রকম ভাবতেন। নিজের ফেলে আসা শহর, ফেলে আসা জীবনচর্যার কাছে বারে বারেই ফিরে যেতেন তাঁর শিল্পচর্চার মাধ্যমে। মুম্বই পাড়ি জমানোর সফর-চিত্রও ফুটে ওঠে হেমার প্রথম প্রদর্শনীতে। আপাত দৃষ্টিতে যা খুবই তুচ্ছ এবং সামান্য বলে মনে হয় সেই সব জিনিস হয়ে উঠত তাঁর শিল্পের উপকরণ। কাগজ, সেল্ফ পোট্রেট-এর কোলাজ, দেশলাই কাঠি— এ সব নিয়েই সেজে উঠত তাঁর শিল্প প্রদর্শনী। শহরবাসীর আর্থ-সামাজিক বৈষম্য, উন্নয়নের তলায় চাপা পড়ে যাওয়া নাগরিক জীবন, বস্তিবাসীর সঙ্কট তাঁকে ভাবাত।

Advertisement

আরও পড়ুন-হেমা উপাধ্যায় হত্যা-কাণ্ডে বারাণসী থেকে গ্রেফতার ২

ধীরে ধীরে শিল্পী হিসেবে হেমার পরিচয় বাড়তে শুরু করে। খ্যাতিও মিলতে শুরু করে। আর তখন থেকে বিড়ম্বনার শুরু। দূরত্ব বাড়তে শুরু করে চিন্তনের সঙ্গে। কিন্তু, ব্যক্তিগত জীবনের সেই প্রভাব শিল্পে কখনই পড়তে দেননি হেমা। ভেতরের যন্ত্রণা বাইরে থেকে বুঝতে দিতেন না কাউকেই। শেষে ১২ বছরের দাম্পত্য ভাঙনের মুখে পড়ে ২০১০-এ। বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা শুরু হয়। হেমার সহপাঠীদের অনেকের বক্তব্য, হেমার ঠিক বিপরীত মেরুর বাসিন্দা চিন্তন। কী ভাবে যে দু’জনের প্রেম হল, তাই নিয়েও চর্চা কম হয়নি। বন্ধুত্ব শেষমেশ বিয়েতে গড়ানোয় অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। তবে, ভাঙনটা ঠিক কবে থেকে, তা ছিল সবারই অজানা।

যে শহরে নিজের শিল্পসত্ত্বাকে খুঁজতে এসেছিল মেয়েটি, যে শহরে দাম্পত্যের দরিয়ায় ভাসাতে চেয়েছিল ভালবাসার নৌকা, সেই শহরেই এক নর্দমার পাশ থেকে উদ্ধার হল তাঁর দেহ। অর্ধনগ্ন, হাত-পা বাঁধা, প্ল্যাস্টিকে মোড়া দেহ ভরা ছিল কার্ডবোর্ডের বাক্সে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement