চিন তাদের সিল্করুট মেগা প্রকল্প নিয়ে যখন গোটা বিশ্বকে পাশে নিতে উদগ্রীব, ঠিক সেই সময়েই চর্তুদেশীয় অভিযানে রওনা হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আগামিকাল রওনা হয়ে ৬ দিনে মোদী যাবেন জার্মানি, স্পেন, রাশিয়া ও ফ্রান্সে। সন্ত্রাস দমন এবং বাণিজ্যই হবে এই সফরের মূল কথা। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় যথেষ্ট কোণঠাসা নয়াদিল্লি মোদীর সফরের মাধ্যমে চাপ থেকে বেরোতে চাইছে।
অনেকেই মনে করেন, শুরু থেকেই বিদেশনীতি নিয়ে চমক দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন মোদী। কিন্তু সরকারের তিন বছর কেটে যাওয়ার পরে এখন দেখা যাচ্ছে, সেই হিসেবে বড়সড় লাভ কিছু হয়নি। বরং গত এক বছরে বিভিন্ন ঘটনায় ভিত কেঁপেছে সাউথ ব্লকের। অভিজাত পরমাণু ক্লাব
এনএসজি-র দরজা তো খোলেইনি, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়টিও তেমন এগোয়নি।
ঘরোয়া ভাবে বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘দলাই লামাকে ঢাকঢোল পিটিয়ে অরুণাচলে নিয়ে যাওয়া হল ঠিকই। কিন্তু বেজিং-কে চাপে ফেলে ভারতের কোনও শর্ত আদায় করা গেল না। উল্টে সংঘাত আরও বেড়ে গেল।’’ পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে চিনের অর্থনৈতিক করিডর নিয়ে বারবার আপত্তি করেছে নয়াদিল্লি। কিন্তু সেই নিষেধে কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছে চিন।
প্রতিবাদে বেজিং-এ ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ সম্মেলন বয়কট করেছে ভারত। কিন্তু সেখানে যোগ দিয়েছে ৩০টিরও বেশি দেশ। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের এই ব্লককে পাশে পাওয়া ভারতের জন্য খুবই জরুরি। গত ছ’মাসে পুরনো বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কেও যে আস্থার অভাব ঘটেছে, তাকে মেরামত করাও মোদীর অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে।
কেন এই চার দেশে সফর?
প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেই আজ তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, জার্মানি সফরে গুরুত্ব পাবে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাস দমনের বিষয়গুলি। এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভূক্তির প্রশ্নে জার্মানির সম্পুর্ণ সমর্থন রয়েছে। আর তিরিশ বছর পর কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন স্পেন। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে সে দেশের বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করবেন মোদী। ফ্রান্সের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-এর সঙ্গে মোদীর আলোচনায় গুরুত্ব পেতে চলেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পর্ষদে সংস্কারের বিষয়টি।
চার দেশের সফরে প্রতিরক্ষা-সমঝোতা, পরমাণু ক্ষেত্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা করবেন মোদী।