জনদরদি প্রমাণ দিতে পিএফ সেই করমুক্তই

সংস্কারের পথে খানিকটা এগোতে চেয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কিন্তু পাঁচ রাজ্যে ভোটের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঝুঁকি নিতে চাইলেন না। ‘জনদরদি’ থাকার রাজনৈতিক দায়ই গুরুত্ব পেল শেষ পর্যন্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্ শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ০৫:৩২
Share:

সংস্কারের পথে খানিকটা এগোতে চেয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কিন্তু পাঁচ রাজ্যে ভোটের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঝুঁকি নিতে চাইলেন না। ‘জনদরদি’ থাকার রাজনৈতিক দায়ই গুরুত্ব পেল শেষ পর্যন্ত। এবং কার্যত সেই চাপের মুখেই জেটলি আজ বাধ্য হলেন প্রভিডেন্ট ফান্ডে কর বসানোর প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিতে।

Advertisement

এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড (এপিএফ)-এ কর বসানোর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে আপত্তি উঠতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রীকে। জেটলি যুক্তি দিয়েছিলেন, অপ্রিয় হলেও আর্থিক সংস্কারের পথে এগোতে ও আরও বেশি মানুষকে পেনশনের আওতায় নিয়ে আসতে এটা জরুরি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দফতর যুক্তি দেয়, বিরোধীরা সরকারকে ‘মধ্যবিত্তের শত্রু’ তকমা দিচ্ছে। ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে বাজেটের অন্য ইতিবাচক দিকগুলি। শেষ পর্যন্ত ঢোঁক গিলতে বাধ্য হলেন অর্থমন্ত্রী। লোকসভায় আজ জানিয়ে দিলেন, ইপিএফ-এ কর বসানোর প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এই প্রস্তাবের সার্বিক পর্যালোচনা করা হবে।

সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, এর থেকেই স্পষ্ট প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের উদ্বেগকে গুরুত্ব দেন। বিজেপি সূত্রে অবশ্য স্বীকার করা হয়েছে, সামনেই পাঁচ রাজ্যের ভোট। আগামী বছর ভোট উত্তরপ্রদেশে। সঙ্ঘ-পরিবার, বিএমএস-এর তরফেও আপত্তি উঠেছিল। তাই রাজনৈতিক ঝুঁকির দিকটি খতিয়ে দেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, ইপিএফ থেকে কর না নেওয়ার অর্থ ঘুরপথে ভর্তুকি দেওয়া। যা যুক্তিসঙ্গত নয়। জেটলি নিজেও আজ লোকসভায় যুক্তি দেন, আরও বেশি মানুষকে পেনশনের আওতায় আনতে এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সর্বোপরি ১৫ হাজার টাকার কম মূল বেতনের কর্মীদের সঞ্চয়ে কর বসবে না, এমনটাই প্রস্তাব করা হয়েছিল। তুলনায় বেশি আয় যাঁদের, তেমন চাকুরিজীবীদের ইপিএফ-এই কর বসানো হয়েছিল। ইপিএফ-এর আওতায় থাকা ৩ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষের মধ্যে যাঁদের সংখ্যা খুবই সামান্য। মাত্র ৫৫ লক্ষ। যাঁদের সরকারি ভর্তুকির প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেও কিছু দিন আগে শিল্পমহলের সঙ্গে আলোচনায় বলেছিলেন, বড়লোকদের ভর্তুকিতে কাটছাঁট করা উচিত।

তবু কেন নিজেদের নীতি ও সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারল না মোদী সরকার? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা যে হবে, তা জানাই ছিল। কিন্তু সেই বিরোধিতা মোকাবিলার লক্ষ্যে আগাম কোনও প্রস্তুতি ছিল না। শুধুমাত্র সচ্ছলদের উপরেই যে এই কর বসানো হচ্ছে, তা-ও বোঝানোর চেষ্টা হয়নি।

সরকার কর-প্রস্তাব প্রত্যাহার করে প্রধানমন্ত্রীকে ‘জনদরদি’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করলেও এর কৃতিত্ব নিতে মাঠে নেমেছেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস সহসভাপতির দাবি, ‘‘মধ্যবিত্তের উপর আঘাত আসছে দেখে আমি সরকারের উপর চাপ তৈরির সিদ্ধান্ত নিই।’’ রাহুলের দাবি, মোদী সরকার চাপে পড়ে কর প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু মধ্যবিত্তের পরিশ্রমের সঞ্চয়ে যে ভাবে হাত দেওয়া হচ্ছিল, তা থেকেই সরকারের জনবিরোধী মনোভাব স্পষ্ট। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ওই ‘জনবিরোধী’ তকমার ভয়েই পিছু হটল সরকার। বামেরা একে মানুষের জয় হিসেবেই দেখাচ্ছে। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘এটা মানুষের জয়। ঐক্যবদ্ধ মানুষের জয় কেউ রুখতে পারবে না।’’

অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা কিন্তু বলছেন, ইপিএফ থেকে টাকা তোলার সময় কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলেই সরকারের জাতীয় পেনশন প্রকল্প (এনপিএস)-এ তেমন সাড়া মেলেনি। শুধুমাত্র সরকারি কর্মীরাই বাধ্য হয়ে সেখানে যোগ দিয়েছেন। অথচ ইপিএফ-এ যেখানে কমবেশি ৮ শতাংশের কাছাকাছি হারে সুদ দেওয়া হয়, সেখানে এনপিএস-এ ১১ শতাংশের বেশি হারে সুদ মেলে। কিন্তু এনপিএস থেকে টাকা তোলার সময় কর দিতে হয়। বাজেটে এনপিএস এবং ইপিএফ-কে এক সারিতে আনতেই জেটলির প্রস্তাব ছিল, দু’টি ক্ষেত্রেই ১ এপ্রিলের পর জমা হওয়া তহবিল থেকে ৪০ শতাংশ টাকা তুলতে গেলে কর দিতে হবে না। বাকি ৬০ শতাংশ টাকা তুলতে গেলে কর দিতে হবে। যদি না সেই টাকা পেনশন প্রকল্পে রাখা হয়। আজ জেটলি জানিয়েছেন, এনপিএস-এর ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ তহবিলে কর ছাড় বহাল থাকবে। যার অর্থ, তুলনামূলক ভাবে এনপিএস আগের চেয়ে আকর্ষণীয় হল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement