মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
বঙ্গে কংগ্রেসকে ১২টি লোকসভা আসন ছাড়া আকাশকুসুম কল্পনা বলেই মনে করছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু না হলেও গত কাল কংগ্রেস সূত্রে বক্তব্য ছিল, তাদের জোট কমিটির বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গে ১২টি আসনের তালিকা তৈরি হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সঙ্গে বৈঠকে এই তালিকা হাতে নিয়েই বসবে কংগ্রেস। তার আগে তৃণমূলের কাছে এ নিয়ে জানতে চাইলে জোট প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক দলীয় নেতার মন্তব্য, “যে দু’টি আসনে তারা জিতেছে, সেই মালদহ দক্ষিণ (আবু হাসেম খান চৌধুরী) এবং বহরমপুর (অধীররঞ্জন চৌধুরী)— কংগ্রেসকে ছাড়া হবে। এর বাইরে সনিয়া গান্ধী সরাসরি ফোন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করলে বাড়তি একটি আসন হয়তো দেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ মোট তিনটির বেশি কখনওই নয়।” বাড়তি আসনকে ‘সৌজন্য আসন’ বলেই চিহ্নিত করছে তৃণমূল। এই ‘সৌজন্য আসনের’ পরিবর্তে সনিয়াকে অনুরোধ করা হতে পারে, মেঘালয়ে একটি আসন তৃণমূলকে ছাড়তে।
রায়গঞ্জ নিয়ে গুঞ্জন, কংগ্রেসের তরফে চাপ থাকবে দীপা দাশমুন্সিকে দাঁড় করানোর জন্য। এই সম্ভাবনাও আজ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। বলা হয়েছে, ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের একারই ৪০ শতাংশ ভোট রয়েছে। যা এ বছর বাড়বে বই কমবে না। ফলে রায়গঞ্জ কংগ্রেসকে ছাড়ার প্রশ্নই নেই। রাজনৈতিক মহলের মতে, সৌজন্য আসন হিসাবে যদি একটি আসন সনিয়ার অনুরোধে ছাড়াও হয়, সেটি গত বারে বিজেপির জেতা আসন হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “বাংলায় বেশির ভাগ আসনেই কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট শতকরা পাঁচ শতাংশের নিচে। তাদের অধিক আসনে লড়তে দেওয়ার কোনও রাজনৈতিক কারণ নেই।” এই দাবিও ওই তৃণমূল নেতা করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে জোট না হলে তৃণমূলের বরং সামান্য হলেও বেশি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা। তবে সেই সঙ্গে এ কথাও বলা হচ্ছে, বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘উদার হৃদয়’ ও ‘ধৈর্যশীল’। আলোচনার মাধ্যমেই তিনি এগোতে চান। কংগ্রেস সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহেই পশ্চিমবঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে। ঘরোয়া স্তরে কংগ্রেস ও তৃণমূলের নেতারা কথা বলছেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে আজ জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করা হবে। রাজ্যে রাজ্যে আসন সমঝোতার জন্য তৈরি কংগ্রেসের জাতীয় জোট কমিটি দু’দিন অন্তর বৈঠক করছে। কোথায় কংগ্রেস আসন দাবি করবে, কোথায় শরিকদের দাবি মেনে নেওয়া হবে, তা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। খড়্গে বলেন, “আলাদা আলাদা রাজ্যে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলির সঙ্গে কথা বলার পরে যা নির্যাস বার হবে, তা বুঝে সকলের সঙ্গে বসে, ওঁরা কী চান, আমরা কী চাই, তা ঠিক করে ফেলা হবে।”
শরিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা বাকি বলে কংগ্রেস নিজে কতগুলি আসনে লড়বে, তা চূড়ান্ত করেনি বলেও জানান খড়্গে। প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেস ২৯০টি-র মতো আসনে নিজের শক্তিতে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কংগ্রেস সভাপতি বলেন, “পাঁচশোর বেশি লোকসভা কেন্দ্রে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হবে। ‘ইন্ডিয়া’র দলগুলির সঙ্গে দর কষাকষির পরে কংগ্রেস কত আসনে লড়বে, তা স্পষ্ট হবে। কারণ আমরা হয়তো অমুক আসনে লড়ব বলে ভাবছি। শরিক দল তাতে রাজি না হয়ে অন্য আসন ছেড়ে দিল। তাই সব লোকসভা কেন্দ্রেই পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে।”