নোট-বাতিল লড়াইয়ে ঐক্য ধরে রাখতে তৎপর তৃণমূল

তৃণমূল নেত্রী চাননি, নোট-বাতিলে মানুষের ভোগান্তি নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে বিরোধী নেতাদের যাওয়ার দিনই রাহুল গাঁধী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করুন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১৩
Share:

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি বিরোধী প্রতিনিধি দল। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। —নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূল নেত্রী চাননি, নোট-বাতিলে মানুষের ভোগান্তি নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে বিরোধী নেতাদের যাওয়ার দিনই রাহুল গাঁধী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করুন।

Advertisement

গত কাল এই মর্মে রাহুলকে বার্তা পাঠিয়েছিলেন মমতা। তাঁর আশঙ্কা ছিল, এর ফলে রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার প্রশ্নে সপা এবং বসপা বেঁকে বসতে পারে। তাঁর পরামর্শ ছিল, একান্ত যদি যেতেই হয়, তা হলে রাহুল নিজে না-গিয়ে কংগ্রেসের দুই সংসদীয় কক্ষের নেতাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠান। মমতার এই অনুরোধ অবশ্য রাখেনি কংগ্রেস। তবে আজ সপা, বসপা, এনসিপি-র মতো দলগুলি রাহুলের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতির কাছে না-গেলেও মমতা মনে করেন, মোদী-বিরোধী ঐক্য অটুট রাখাটা জরুরি। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে যে স্মারকলিপিটি জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে কিন্তু সব বিরোধী দলের নেতাদেরই সই রয়েছে। সংসদ শেষ হওয়ার পর আগামী দিনগুলিতে যাতে এই ঐক্য ধরে রাখা যায়, তার জন্য সচেষ্ট হতে তৃণমূল নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আগামি ২২ তারিখ কলকাতায় তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে সবিস্তার আলোচনা হবে। ২৬ তারিখে বৈঠকটি হওয়ার কথা থাকলেও তা চার দিন এগিয়ে এনেছেন নেত্রী।

উত্তরপ্রদেশ এবং পঞ্জাবের কৃষক সমস্যা নিয়ে আজ রাহুল প্রধানমন্ত্রীর কাছে যান। তা নিয়ে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, এ’টি কংগ্রেসের নিজস্ব কর্মসূচি। কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদের কথায়, ‘‘কথাই হয়ে গিয়েছিল যে প্রত্যেকটি দল যে যার নিজের কর্মসূচিও বহাল রাখবে। সেই অনুযায়ীই আমরা আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের ক্ষোভের কথা জানাতে গিয়েছিলাম।’’ উদাহরণ হিসাবে কংগ্রেস নেতৃত্ব বলছেন, এর আগে মমতাও নিজে রাষ্ট্রপতির কাছে সময় চেয়ে পরে কংগ্রেসকে জানিয়েছিলেন। সেটা তাঁর দলীয় কর্মসূচি ছিল বলে কংগ্রেস যায়নি। কিন্তু তার মানে এই নয়, যৌথ আন্দোলন হবে না। তবে আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার বিষয়টি রাহুল নিচু স্বরেই রাখতে চেয়েছেন। এ নিয়ে কোনও সাংবাদিক সম্মেলনও করেননি। সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সামনের দরজা দিয়ে না-ঢুকে গিয়েছেন পিছনের দরজা দিয়ে।

Advertisement

মমতার নির্দেশে আজ তৃণমূলের লোকসভা এবং রাজ্যসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েনও বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগে তৎপর থেকেছেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে সনিয়া গাঁধী, মনমোহন সিংহ ও রাহুল গাঁধীর নাম করে ধন্যবাদ দিয়েছেন সুদীপ। বলেছেন, ‘‘আজ এক শক্তিশালী প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছে। আমরা আগামী দিনেও একই রকম ঐক্যবদ্ধ থাকব। নোট-বাতিলের জেরে মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে আমরা যে কোনও ধারায় সংসদে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। আমাদের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ফিরেই সুদীপ দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলেছেন মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গে। ডেরেকও কথা বলেন মায়াবতীর সঙ্গে। ডেরেক বলেন, ‘‘আমরা সপা এবং বসপা নেতৃত্বকে জানিয়েছি যে উত্তরপ্রদেশ নিয়ে আপনাদের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার দিকটি আমরা বুঝি। তাই আজ আপনাদের না-যাওয়া নিয়েও আমাদের ভুল বোঝার অবকাশ নেই। ভবিষ্যতে আমরা যাতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করতে পারি, সে দিকে নজর দিতে হবে।’’

যে পাঁচটি দল আজ অনুপস্থিত থাকল তাদের মধ্যে রয়েছে সিপিএম এবং সিপিআই-ও। রাষ্ট্রপতি ভবন অভিযানের মাধ্যমে একটি নিঃশব্দ পালাবদলও আজ সংঘটিত হয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে। স্পষ্ট হয়ে গেল কংগ্রেসের পাশে আর সিপিএম নেই। সেই জায়গা নিয়েছে তৃণমূল। গত এক মাস যৌথ ধর্না এবং বিরোধীদের বৈঠকে রাহুলের পাশে দেখা গিয়েছে সুদীপকে। সেই ধর্নায় থেকেছেন সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি বা সিপিআইয়ের ডি রাজা। কিন্তু আজ রাহুল এবং সনিয়ার সঙ্গে একই ফ্রেমে দেখা গিয়েছে সুদীপ, ডেরেক, সুগত বসু, সৌগত রায়দের। অন্য দিকে সিপিএমকে সঙ্গে নেওয়ার জন্য কোনও বাড়তি উদ্যোগও দেখা যায়নি কংগ্রেসের পক্ষ থেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement