ফাইল চিত্র।
ত্রিপুরায় রাজনৈতিক হিংসার জন্য শাসক দল বিজেপিকে দায়ী করে সরব হল সিপিএম ও তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব আবার রাজনৈতিক হিংসাকে বামেদের ‘পরম্পরা’ বলে দাবি করে ত্রিপুরা থেকে সিপিএমকে হঠানোর পাল্টা ডাক দিলেন। এরই মধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আগরতলায় মিছিলের অনুমতি না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হল তৃণমূল।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো-র (এনসিআরবি) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক সংঘর্ষের নিরিখে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরা এক নম্বরে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে সক্রিয় হয়েছে তৃণমূল, তৎপরতা বাড়িয়েছে সিপিএমও। কয়েক দিন আগেই সিপিএমের রাজ্য দফতর-সহ একাধিক কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছে গেরুয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে। এমন তপ্ত আবহে এনসিআরবি-র রিপোর্ট নতুন অস্ত্র জুগিয়েছে বিরোধী শিবিরকে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির যেমন দাবি, ‘‘ত্রিপুরায় অপশাসন এবং জনপ্রিয়তা হারানোর ধারাবাহিক ঘটনাকে আড়াল করতে বিজেপি ফ্যাসিবাদী কায়দা ব্যবহার করছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। এনসিআরবি-র রিপোর্ট এটাই ফের প্রমাণ করছে।’’
এরই পাল্টা হিসেবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব টুইটে মন্তব্য করেছেন, ‘‘ত্রিপুরায় হিংসা সিপিএমের তৈরি করা পরম্পরা। সিপিএমের আমলে ২০১৭ সালে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ছিল ৭৫টি, বলি হয়েছিলেন ১৭৫ জন। তিন বছরে আমরা ওই ধরনের ঘটনা এক-তৃতীয়াংশে কমিয়ে এনেছি। মাত্র ২২টি ঘটনা ঘটেছে, মারা গিয়েছেন ৫১ জন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর আরও সংযোজন, ‘‘ত্রিপুরা থেকে অপরাধ হঠাতে হলে সিপিএমকে হঠাতে হবে!’’
রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে কলকাতায় মনোনয়ন জমা দিতে এসে সুস্মিতা দেব সোমবার রাজনৈতিক হিংসার প্রসঙ্গে বিপ্লবের সরকারের দিকেই আঙুল তুলেছেন। রাজ্যসভায় গেলেও ‘পাখির চোখ’ ত্রিপুরাই বলে মন্তব্য করেছেন সুস্মিতা। বিধানসভার সচিবের কাছে মনোনয়ন জমা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীদের কাজকর্মে বাধা দিচ্ছে বিজেপির সরকার, হামলা চালাচ্ছে। বিজেপি সরকারের এই কাজকর্মের মুখোশ খুলে দিতে হবে আমাদের। মনে রাখতে হবে, আমরা কিন্তু কোনও ভাবেই আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা তৈরি করিনি।’’ অভিষেকের নেতৃত্বে কাল, বুধবারের মিছিলের জন্য আদালতে যেতে হয়েছে বলেও তিনি জানান। প্রসঙ্গত, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, এ বারও রাজ্যসভায় বিজেপি প্রার্থী দিচ্ছে না। কারণ, সংখ্যার নিরিখে তা অর্থহীন।
ত্রিপুরায় পুলিশের অনুমতি না মেলায় দু’দফায় মিছিলের দিন পিছিয়েছে তৃণমূল। তার পরেও পুলিশ-প্রশাসনের টালবাহানা চলতে থাকায় ত্রিপুরা হাইকোর্টে আবেদন করেছে তারা। বিচারপতি অরিন্দম লোধ সরকারি আইনজীবীকে আজ, মঙ্গলবারের মধ্যে সরকারের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তৃণমূলের আইনজীবী শঙ্কর লোধ জানান, ফের শুনানি হওয়ার কথা আজ, মঙ্গলবার। ত্রিপুরার তৃণমূল নেতা সুবল ভৌমিকের বক্তব্য, “আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে পদযাত্রা করতে আগ্রহী। উপায়ান্তর না দেখেই শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে আবেদন করতে হল।” এরই পাশাপাশি, খোয়াই থানায় ঢুকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় অভিষেক, দোলা সেন, ব্রাত্য বসু, কুণাল ঘোষ, সুবল ও প্রকাশ দাসকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছে পুলিশ।
বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (তখনও তিনি ওই পদে ছিলেন) অবশ্য কটাক্ষ করেছেন, ‘‘আমরা তো অনেক বার গিয়েছি। ওঁরাও দেখে আসুন, আদালত কেমন লাগে!’’ সুস্মিতার জবাবে দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘ত্রিপুরা যাওয়ার আগে তো পশ্চিমবঙ্গ এক্সপোজ হয়ে যাচ্ছে! এখানকার পুলিশের তদন্ত রিপোর্টকে আদালত মানছে না! মুখ্যমন্ত্রীর কথা, কোনও তদন্তকারী সংস্থা কাউকেই মানছেন না। তাঁরা কার দিকে আঙুল তোলেন?’’