Congress

‘অ্যালার্জি’ সরিয়ে অধীরের পাশে তৃণমূলও

সংসদের বাদল অধিবেশন শুক্রবার শেষ হয়েছে। অভূতপূর্ব ভাবে এই অধিবেশনে মোট চার জন সাংসদকে লোকসভা ও রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৫১
Share:

সংসদ ভবন চত্বরে কংগ্রেস সাংসদদের প্রতিবাদ মিছিল। ছবি: পিটিআই।

যে অধীর চৌধুরী ছিলেন কংগ্রেসের প্রতি তৃণমূলের ‘অ্যালার্জি’র প্রধান কারণ, আজ ইন্ডিয়া জোটের পক্ষ থেকে দিল্লিতে তাঁরই পাশে দাঁড়াতে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে।

Advertisement

সংসদের বাদল অধিবেশন শুক্রবার শেষ হয়েছে। অভূতপূর্ব ভাবে এই অধিবেশনে মোট চার জন সাংসদকে লোকসভা ও রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। রাজ্যসভায় আম আদমি পার্টির দলনেতা সঞ্জয় সিংহ, লোকসভায় ওই দলেরই সাংসদ সুশীল কুমার রিঙ্কুকে আগেই সাসপেন্ড করা হয়েছিল। শুক্রবার অধিবেশনের শেষ দিনে রাজ্যসভার আম আদমি পার্টির সাংসদ রাঘব চাড্ডাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামনেই তাঁকে নীরব মোদী ও অন্ধ রাজার সঙ্গে তুলনা করার পরে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।

আজ রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছেন, “অধীর-সহ সমস্ত সাসপেন্ড হওয়া বিরোধী সাংসদদের পক্ষে আমরা একজোট।” অধীর রাজ্য রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরব বলে তাঁর সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের সম্পর্ক কোনও দিনই মধুর নয়। এমনকি, প্রধানমন্ত্রীও গতকাল ইঙ্গিত করেছিলেন, কলকাতা থেকে কোনও ফোনের কারণেই কি অধীরকে বিতর্কে প্রথমে বলতে দেওয়া হয়নি। তবে বাস্তবে সেই লড়াইকে রাজ্যে ফেলে রেখে অধীরের সাসপেনশনের পর দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকদের মতো তার পাশেই থাকতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

Advertisement

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বক্তব্য, অধীর লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতার পাশাপাশি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি-র (পিএসি) চেয়ারম্যান। এই কমিটি সরকারের অনিয়ম সংক্রান্ত সিএজি-র রিপোর্ট খতিয়ে দেখে। অধীরকে সাসপেন্ড করার ফলে তিনি পিএসি-র বৈঠকে হাজির থাকতে পারবেন না। কংগ্রেস নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অধীর সিবিআই ডিরেক্টর, সিভিসি বাছাইয়ের কমিটিতেও রয়েছেন। কংগ্রেসের সাংসদ, আইনজীবী মণীশ তিওয়ারির মতে, অধীরের সাসপেনশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা যায়।

ডেরেকের কথায়, ‘‘বিরোধী সাংসদদের সাসপেন্ড করা ওরা অস্ত্রের মতো ব্যবহার করছে। এটা গণতন্ত্রের উপর আঘাত। প্রধানমন্ত্রী খুব মন দিয়ে শুনুন, এই আচরণ ইন্ডিয়াকে শক্তিশালীই করবে।” প্রধানমন্ত্রী তাঁর লোকসভার বক্তৃতায় ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের মধ্যে রাজ্যে রাজ্যে সংঘাতের প্রসঙ্গ তুলেছেন। অধীরের সঙ্গে তৃণমূলের বিবাদ নিয়েও খোঁচা দিয়েছেন। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, গতকাল অধীর চৌধুরী বা আজ রাঘব চাড্ডাকে সাসপেন্ড করে আসলে মোদী আসলে বিরোধীদের মধ্যে জোট কতখানি মজবুত, তা পরীক্ষা করতে চাইছেন।

অধীরের শাস্তির প্রতিবাদে সংসদ চত্বরে অম্বেডকরের মূর্তির সামনে ধর্নায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বা ডেরেকের মতো শীর্ষ সংসদীয় নেতারা যাননি ঠিকই। তবে উপস্থিত ছিলেন শান্তা ছেত্রী, সুস্মিতা দেব, সাকেত গোখলের মতো তৃণমূল সাংসদরা। তৃণমূল যেমন অধীরের সাসপেনশনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, তেমনই কংগ্রেসও বিবাদ সরিয়ে রেখে আম আদমি পার্টির সাংসদদের সাসপেন্ড করার বিরোধিতা করেছে। মণিপুর নিয়ে আলোচনা চেয়ে হট্টগোল করার জন্য আপ-এর সঞ্জয় সিংহ, সুশীল কুমারদের সাসপেন্ড করা হয়েছিল। রাঘব দিল্লির আমলাদের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তুলে, বিজু জনতা দল, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সাংসদদের অনুমতি ছাড়াই ওই কমিটির সদস্য হিসেবে তাঁদের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ এনে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। রাজ্যসভার নেতা পীযূষ গয়াল রাঘবের সাসপেনশনের প্রস্তাব আনেন। অধীর, সঞ্জয় ও রাঘব, তিন জনের বিরুদ্ধেই স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ তুলে স্বাধিকার রক্ষা কমিটির রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সাসপেন্ড করা হয়েছে। রাঘবের মন্তব্য, ‘‘বিজেপি-কে কঠিন প্রশ্ন করার অপরাধে আমাকে সাসপেন্ড হতে হল। বিজেপি বিশ্বের বৃহত্তম দল। তারা সংসদে দিল্লি পরিষেবা বিল নিয়ে আমার বক্তৃতায় তোলা প্রশ্নের জবাব দিতে পারল না।”

অধীর-সহ বিরোধী সাংসদদের সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে আজ ইন্ডিয়া জোটের সাংসদরা অধিবেশন বয়কট করে চত্বরে অম্বেডকরের মূর্তির সামনে ধর্না দেন। রাহুল গান্ধীও সেই ধর্নায় যোগ দেন। ধর্না থেকে মোদীর বিরুদ্ধে অধীরের সুরেই ‘মণিপুর নিয়ে নীরব মোদী’ স্লোগান ওঠে। রাহুল পরে বলেন, ‘‘বিরোধী সাংসদদের সংসদ থেকে বের করা হোক বা ফিরিয়ে আনা হোক, আমাদের কাজ চলতে থাকবে।’’

বিরোধী ঐক্যের বার্তা দিয়ে শাস্তিপ্রাপ্ত আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ বলেন, “মণিপুরের হিংসা কমানো নয়, আমাদের স্তব্ধ করাই তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল। ওরা বিরোধীদের স্বর স্তব্ধ করতে চায়। রাহুল গান্ধী সংসদে কথা বললেন তাঁকে সাসপেন্ড করা হল। একই ভাবে অধীর চৌধুরীকেও সাসপেন্ড করা হল। আমরা এতে ভীত নই, লড়াই চালিয়ে যাব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement