নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে আয়েও কংগ্রেসকে টেক্কা দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। প্রতীকী ছবি।
আয়ের মাপকাঠিতে বিজেপির পরেই দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিল কংগ্রেসকে।
২০২১-এর বিধানসভা ভোটের বছরে তৃণমূলের আয় ছিল কংগ্রেসের থেকেও বেশি। ২০২১-২২ অর্থ বছরে তৃণমূলের আয় তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৬৩৩ শতাংশ (৭৪.৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৫৪৫.৭৫ কোটি টাকা) বেড়েছিল। তৃণমূলের মোট আয়ের ৯৬ শতাংশেরও বেশি অর্থ এসেছিল নির্বাচনী বন্ড থেকে। সেই হিসেবে বিজেপিকেও ছাপিয়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, নির্বাচনী বন্ডের বেশির ভাগ চাঁদাই বিজেপির ঝুলিতে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, অন্যান্য দলের তুলনায় বিজেপি অনেক বেশি টাকা নির্বাচনী বন্ড থেকে পেয়েছে। কিন্তু বিজেপির মোট আয়ের ৫৪ শতাংশ অর্থ নির্বাচনী বন্ড থেকে এসেছে। সেই তুলনায় তৃণমূলের মোট আয়ের ৯৬.৭৭ শতাংশ আয়ই নির্বাচনী বন্ড থেকে এসেছে। যার অর্থ, কর্পোরেট সংস্থা বা বড় প্রতিষ্ঠানের থেকেই তৃণমূলের আয়ের বেশির ভাগ চাঁদা আসছে।
নির্বাচন নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা— অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর) আজ ২০২১-২২-এ জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলির আয়-ব্যয়ের খতিয়ান বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে বিজেপির মোট আয় ছিল প্রায় ১৯১৭ কোটি টাকা। আয়ের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে থাকা তৃণমূলের আয় ছিল ৫৪৫.৭৫ কোটি টাকা। কংগ্রেসের আয় ছিল ৫৪১.২৭ কোটি টাকা। তিন দলের মধ্যে কোষাগারের অবস্থা যে কংগ্রেসের সবথেকে খারাপ, তারও প্রমাণ মিলেছে। বিজেপি ও তৃণমূলকে আয়ের অর্ধেকই খরচ করতে হয়নি। কিন্তু কংগ্রেসের যা আয় হয়েছে, তার প্রায় শতকরা ৭৪ ভাগ অর্থই খরচ হয়ে গিয়েছে।
অরুণ জেটলি অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন মোদী সরকার যখন নির্বাচনী বন্ড চালু করে, সে সময় তৃণমূল দাবি তুলেছিল, নির্বাচনী বন্ডে আরও স্বচ্ছতা আনা হোক। কোন কর্পোরেট সংস্থা কোন দলকে চাঁদা দিচ্ছে, তা তথ্যের অধিকার আইনে আওতায় আনা হোক। কারণ, এই ব্যবস্থায় সবটাই গোপন। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের আয়কর দফতর তা জানতে পারে। এখন তৃণমূল নিজেই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বেশির ভাগ আয় করলেও দলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনী তহবিল তৈরি করে সরকারি অর্থে বিভিন্ন দল ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। কিন্তু তা মানা হয়নি। শেষ পর্যন্ত যখন নির্বাচনী বন্ড আনা হল, আমরা তার গোপনীয়তার বিরুদ্ধে ছিলাম। নির্বাচনে খরচ মেটাতে সব দলেরই অর্থ প্রয়োজন। দিন দিন সেই খরচ বাড়ছে। এখনও কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে পারে।’’
শুধু মোট আয় নয়, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে আয়েও কংগ্রেসকে টেক্কা দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। ২০২১-২২ বিজেপি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে প্রায় ১০৩৩ কোটি টাকা আয় করেছিল। কংগ্রেস পেয়েছিল ২৩৬ কোটি টাকা। সেই তুলনায় তৃণমূল নির্বাচনী বন্ড থেকে প্রায় ৫২৮ কোটি টাকা আয় করেছিল।