তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ প্রার্থী সাগরিকা ঘোষ। ছবি: ফেসবুক।
রাজ্যসভার টিকিট পাওয়া নিয়ে ছ’বছর আগে যা লিখেছিলেন, তা ভুল নয়! ব্যাখ্যা দিলেন তৃণমূলের সদ্য মনোনীত রাজ্যসভার সাংসদ পদপ্রার্থী সাগরিকা ঘোষ। একই সঙ্গে জানালেন, ‘গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর কর্তব্যবোধ’ থেকেই তিনি তৃণমূলের প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন।
সাংবাদিক রাজদীপ সরদেশাইয়ের স্ত্রী সাগরিকা নিজেও পেশায় সাংবাদিক। ছ’বছর আগে টুইটারে (বর্তমানে এক্স হ্যান্ডেল) কিছুটা জোর দিয়েই লিখেছিলেন, ‘‘আমি কোনও রাজনৈতিক দলের দেওয়া রাজ্যসভার টিকিট কখনও গ্রহণ করব না! আমি এটা লিখে দিতে পারি। আর আপনারা এই টুইট সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।’’ ঘটনাচক্রে, ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ করা এই টুইটের ছ’বছর পরে গত শনিবার তৃণমূল সাগরিকাকে রাজ্যসভার টিকিট দেয়। সাগরিকা অবশ্য সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেননি। বরং এক্স হ্যান্ডলেই একটি পোস্ট করে সেই প্রস্তাবকে সাদরে গ্রহণ করেন তিনি। আর তার পর থেকেই সাংবাদিক সাগরিকার ওই পুরনো টুইট ভাইরাল হয়েছিল ইন্টারনেটে।
তাতে দেখা যাচ্ছে ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ নিজের বক্তব্যের সমর্থনে আরও একটি টুইট করেছেন সাগরিকা। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘সাংবাদিকদের রাজনীতি থেকে দূরে থাকা উচিত। এমনকি তাঁদের কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুগত হওয়াও উচিত নয়। কারণ, তাতে একজন সাংবাদিকের স্বাধীনতা নষ্ট হয়। তাই সাংবাদিকদের উচিত গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করা, সত্যের পক্ষে কাজ করা এবং রাজনৈতিক নেতাদের আসল চেহারাগুলো টেনে খুলে দেওয়া।’’
সাংবাদিকের পুরনো দাবির প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তাঁর আসল বক্তব্য কোনটি। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ যা বলেছিলেন, সেটা, না আজ যা বলছেন, সেই কথা? মঙ্গলবার এই বিতর্কেরই জবাব দিয়েছেন সাগরিকা।
সাগরিকা ঘোষের ২০১৮ সালের টুইট। ছবি: সংগৃহীত।
দু’টি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘ছ’বছর আগে আমার লেখা একটি টুইট চার দিকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, যখন আমি এ কথা লিখেছিলাম, তখন আমি একজন পেশাদার সাংবাদিক ছিলাম। আমার পক্ষে সেই সময় আমার পেশাকে রাতারাতি ছেড়ে রাজনৈতিক দলে যোগ দান করা যথাযথ কাজ হত না। কিন্তু ২০২০ সালে আমি পূর্ণ সময়ে সাংবাদিকতা থেকে সরে আসি। আর গত তিন বছর ধরে আমি বিভিন্ন সংবাদপত্রে কলাম লেখক হিসাবে ফ্রিল্যান্স বা স্বাধীন ভাবে কাজ করি। সুতরাং জনতার কাজের জন্য ঝাঁপানোর আগে পূর্ণ সময়ের পেশাদার সাংবাদিকতা থেকে গত তিন বছরের বিশ্রাম নিয়েছি।’’
দ্বিতীয় টুইটে তাঁর বক্তব্য আরও স্পষ্ট করে সাগরিকা লিখেছেন, ‘‘আজ যখন দেখছি কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার একনায়কত্ব চালাচ্ছে এবং সমগ্র সংবাদমাধ্যমকে নিজের হস্তগত করে নিয়েছে, তখন সাংবিধানিক গণতন্ত্রের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা থেকেই আমি তৃণমূলের সাহসী যুদ্ধে যোগ দিয়েছি।’’
প্রসঙ্গত, রাজ্যসভার সাংসদ প্রার্থী হিসাবে তৃণমূলের মনোনয়ন পেলেও সাগরিকা এখনও মনোনয়ন পত্র জমা দেননি। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের মনোনীত চার রাজ্যসভা প্রার্থীর মধ্যে তিন জন মঙ্গলবার মনোনয়ন পত্র জমা দিলেও সাগরিকা তা জমা দেবেন বৃহস্পতিবার। তৃণমূলের ওই সূত্রের খবর, নিজের প্রার্থী হওয়ার খবর অনেক দেরিতে জেনেছেন সাগরিকা। তাই রাজ্যসভা ভোটে প্রার্থী হতে গেলে যে সমস্ত নথির প্রয়োজন হয়, তা জোগাড় করতে তাঁর একটু সময় লাগছে।