শতাব্দী রায় এবং স্মৃতি ইরানি।
উন্নাওয়ের মেয়েটি কী দোষ করেছে? বাকি জীবন সে কী করে কাটাবে? শিশু ধর্ষণে ফাঁসির সাজা দিয়ে পকসো আইন পাশ করাতে গিয়ে আজ এ হেন প্রশ্নের মুখে পড়ল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
তৃণমূলের শতাব্দী রায় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে প্রশ্ন করেন, ‘‘উন্নাওয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, তার কী উত্তর দেবেন? আমি মন্ত্রীকে নয়, মাকে জিজ্ঞাসা করছি। আমি মায়ের থেকে উত্তর আশা করছি।’’
উন্নাওয়ের নিগৃহীতার বয়স ১৭ বছর। বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। তার পর নিগৃহীতাকে ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি নেতৃত্ব, কেন্দ্রের মোদী সরকার ও যোগী আদিত্যনাথের সরকার কুলদীপকে আড়াল করছে বলেও অভিযোগ।
তার মধ্যেই শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ (পকসো) আইন কড়া করতে গিয়ে এই প্রশ্নের মুখে পড়ে দৃশ্যতই বিব্রত স্মৃতি বলেন, ‘‘আইনে কোথাও বলা নেই, সাংসদ বা বিধায়ক আইনের ঊর্ধ্বে।’’ শতাব্দী উন্নাও প্রসঙ্গ তুলে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলায় বিরোধী সাংসদেরা টেবিল চাপড়ে বাহবা জানিয়েছিলেন। স্মৃতি বলেন, ‘‘শতাব্দী আমাকে মা হিসেবে প্রশ্ন করেছিলেন। তাতে কিছু পুরুষ সাংসদের টেবিল চাপড়ানো মানায় না।’’ উন্নাও নিয়ে প্রশ্নের জবাবে স্মৃতির ব্যাখ্যা, নির্ভয়া কাণ্ডের পরে ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে সংশোধন করে ধর্ষণে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা হয়েছিল। মোদী সরকার আইন এনেছে। নৃশংস অপরাধে ফাঁসির নিদানও রয়েছে। প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত শাস্তি দেবে। সাংসদ হোন বা বিধায়ক, কেউ তার বাইরে থাকবেন না।
অভিযোগ, উন্নাওয়ের নিগৃহীতার নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা করেনি পুলিশ। স্মৃতি বলেন, নিগৃহীতাদের কী ভাবে নিরাপত্তা দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সব রাজ্যকে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে।
রাজ্যসভার পরে লোকসভাতেও আজ পাশ হল পকসো বিল। কিন্তু অনেকেই সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন, শিশু ধর্ষণে ফাঁসির ব্যবস্থা করে কি অপরাধ ঠেকানো যাবে? কারণ, ২০১৬-র ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর হিসেব বলছে, ৯৪ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে পরিবারের লোক বা আত্মীয়রাই অপরাধ করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাই অভিযোগই দায়ের হয় না। পকসো সংশোধনী বিলে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনে দোষী সাব্যস্ত হলে কমপক্ষে ২০ বছর কারাদণ্ড হবে। সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। সাংসদদের প্রশ্ন, কেউই পরিবারের কারও ফাঁসি চাইবে না। ফলে অভিযোগ দায়েরের সংখ্যা আরও কমে যাবে।