ব্রিগেডের মঞ্চে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী শিবির। হাজির বিরোধী দলের প্রথম সারির নেতারা। ছবি সৌজন্য তৃণমূলের টুইটার।
বিরোধী ঐক্যের প্রথম বৃহত্তম সমাবেশটার আয়োজন তো করলেনই। অস্বস্তিকর রাজনৈতিক প্রশ্নটার জবাবও খুব স্পষ্ট করে দিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প হিসেবে কোন মুখটাকে তুলে ধরবে সম্মিলিত বিরোধী শিবির? বিজেপি বার বার এই প্রশ্ন তুলছে। ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চ থেকে শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্ব্যর্থহীন জবাব, ‘‘কে প্রধানমন্ত্রী হবে ভাবার কোনও দরকার নেই। নির্বাচনের পরে আমরা সবাই মিলে ঠিক করব, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন।’’ প্রধানমন্ত্রীকে তৃণমূল চেয়ারপার্সনের তীব্র কটাক্ষ, ‘‘মোদী সরকারের এক্সপায়ারি ডেট এসে গিয়েছে।’’
মজবুত বিরোধী ঐক্যের ডাক, দিল্লির মসনদ থেকে যে কোনও মূল্যে নরেন্দ্র মোদীকে সরানোর ডাক, বিপুল সমাবেশের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দনের বন্যা— ব্রিগেড সমাবেশে সব বক্তার কণ্ঠেই এ দিন ছিল একই সুর। বিপুল জনস্রোত দেখে সর্বাগ্রে উচ্ছ্বাসটা ব্যক্ত করলেন তরুণতম বক্তা তথা এ দিনের সমাবেশের প্রথম বক্তা হার্দিক পটেল। কিছুক্ষণ পরে ভিড়ের চেহারা দেখে একই রকম বিস্ময় ব্যক্ত করলেন আরএলডি প্রধান অজিত সিংহের ছেলে জয়ন্ত। পরে সপা সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব বললেন, ‘‘যত দূর পর্যন্ত চোখ যাচ্ছে, দেখছি শুধু মাথা আর মাথা।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা মেগা সমাবেশ এ ভাবেই চোখ ধাঁধিয়ে দিল জাতীয় রাজনীতির রথী-মহারথীদের। আর কোনও প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে এই প্রথম বার এত বড় কোনও রাজনৈতিক সমীকরণ বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ের ডাক দিল।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বিজেপি বিরোধী প্রায় সব শক্তির মধ্যে সমঝোতা তৈরির প্রয়াস বছর খানেক ধরেই চলছে। কখনও অখিলেশ বা কেজরীবালের ডাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছুটে গিয়েছেন লখনউ বা দিল্লিতে। কখনও সনিয়া গাঁধীর ডাকে দিল্লিতে বৈঠকে বসেছে বিভিন্ন বিরোধী দল। কখনও চন্দ্রবাবু নায়ডু সচেষ্ট হয়েছেন। কিন্তু বিজেপি বিরোধী প্রায় সব দলকে এক মঞ্চে এনে এত বড় প্রকাশ্য সমাবেশ এই প্রথম। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবেগৌড়া থেকে মরাঠা স্ট্রংম্যান শরদ পওয়ার, লোকসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে থেকে তেলুগু দেশম সুপ্রিমো চন্দ্রবাবু নায়ডু, আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল থেকে ডিএমকে সুপ্রিমো এম কে স্ট্যালিন— প্রত্যেকে এ দিন পঞ্চমুখে প্রশংসা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সপা সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব খুব স্পষ্ট করে বললেন, ‘‘বাংলা থেকে আজ যা শুরু হল, গোটা দেশে এ বার তা-ই চলবে।’’
‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া র্যালি’— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নামই দিয়েছেন এ দিনের সমাবেশে। মোদী বিরোধিতার তাগিদেই হোক বা অন্য কোনও কারণে, ভারতের সব প্রান্ত থেকে প্রায় সব উল্লেখযোগ্য অ-বিজেপি শক্তি যে ভাবে এ দিন হাজির হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে, তা মোদী জমানায় কখনও দেখা যায়নি। ‘মোদী হটাও দেশ বাঁচাও’ স্লোগান তুলে এই মঞ্চে সামিল হয়েছেন শরদ পওয়ার, অখিলেশ যাদব, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, বিএসপি নেত্রী মায়াবতীর প্রতিনিধি সতীশ মিশ্র, চন্দ্রবাবু নায়ডু, যশবন্ত সিন্হা, অরবিন্দ কেজরীওয়াল, এইচ ডি দেবগৌড়া, ওমর আবদুল্লা, ফারুক আবদুল্লা, এম কে স্ট্যালিন, গেগং আপাং, হেমন্ত সরেনের মতো প্রথম সারির নেতারা। বিরোধী ঐক্যের এই মঞ্চে হাজির হয়েছেন হার্দিক পটেল, জিগ্নেশ মেবাণী।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর ‘এক্সপায়ারি ডেট’ চলে এসেছে: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
আরও পড়ুন: দুর্নীতি রুখছি বলে কেউ কেউ আমার উপর খুব চটেছেন, বিরোধীদের কটাক্ষ মোদীর
২০১৯-এ নতুন সরকার গড়ার, ঐক্যবদ্ধ ভারত গড়ার ডাক দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে একমঞ্চে বিরোধীদের সামিল করতে পেরেছেন তার প্রশংসা করেন নেতারা।বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের ‘অপশাসন, দুর্নীতি এবং গণতান্ত্রিক কাঠামো অকেজো করে দেওয়ার বিরুদ্ধে সকাল থেকেই একের পর এক নেতা সরব হয়েছেন।
মোদী সরকারের অধীনে দেশ বিপর্যস্ত। এই সরকারের বিরুদ্ধে সকলকে একজোট হয়ে লড়তে হবে। সেই বার্তা দিতেই তিনি এই মঞ্চে হাজির হয়েছেন বলে জানান যশবন্ত সিন্হা। তিনি বলেন, “৫৬ মাসে দেশ বিপর্যস্ত। দেশের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত। দেশের আর্থিক ব্যবস্থা চৌপাট হয়ে গিয়েছে।”