রাজ্যে ভোটের প্রচারে তৃণমূল বলছে, নারদ-নিউজের ‘স্টিং অপারেশন’ আসলে তাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত। মানুষ তা কী ভাবে নিচ্ছেন সেটা জানা যাবে ১৯ মে। কিন্তু ভোটের আগেই সততার প্রশ্নে লোকসভার নীতি কমিটির তদন্তের মুখে পড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংসদরা। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে ম্যাথু সামুয়েলের সংস্থা নারদ-নিউজের কাছ থেকে।
আলাদা নীতি কমিটি রয়েছে রাজ্যসভাতেও। কিন্তু সেই কমিটির কাছে বিষয়টি পাঠানোর প্রশ্নে রাজ্যসভায় আজ বিতর্ক হলেও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এতে প্রথম রাউন্ডে তৃণমূল শিবির খানিকটা স্বস্তি পেলেও দুপুর বারোটার পরে তা মুছে যায় স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের সিদ্ধান্তে। তৃণমূল সাংসদদের ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি লোকসভার নীতি কমিটির কাছে পাঠান তিনি। লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বে সেই কমিটি এখন ঠিক করবে সৌগত রায়, সুলতান আহমেদদের সংসদীয় জীবনের মেয়াদ আর ক’দিন। ২০০৫ সালে এমনই এক ‘স্টিং’ অভিযানে সাংসদদের ঘুষ-কাণ্ড সামনে আসায় বিষয়টি গিয়েছিল নীতি কমিটির কাছে। তাদেরই সুপারিশে সাংসদপদ খোয়ান ১১ জন। অশনি সংকেত তাই তৃণমূল শিবিরে। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য তারা স্পিকারের কাছে আবেদন জানাবে। সৌগতবাবু বলেন, ‘‘স্পিকারের কাছে ওই সিদ্ধান্ত ভেবে দেখার জন্য আবেদন জানাব।’’
বাম ও কংগ্রেসের নেতারা কিন্তু একে বিজেপি-তৃণমূল গোপন বোঝাপড়া হিসেবেই দেখছেন। তাঁদের মতে লোকসভায় তৃণমূলের কয়েক জন সাংসদের সদস্যপদ খারিজ হলেও বিজেপির কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু রাজ্যসভায় তৃণমূলই তাদের উতরে দিচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। তাই রাজ্যসভার নীতি কমিটির কাছে বিষয়টি পাঠানো নিয়ে চাপ দিচ্ছে না বিজেপি। বাম-কংগ্রেস উভয় পক্ষই তাই চাইছেন, ফৌজদারি মামলা দায়ের করে সিবিআই বা অন্য কেন্দ্রীয় সংস্থা এর তদন্ত করুক। কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু গত কালই জানান, সরকার নিজে থেকে তদন্ত শুরু করতে পারে। কিংবা স্পিকার পদক্ষেপ করতে পারেন। সূত্রের খবর, আজ সকালে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও নায়ডুর মধ্যে। দলীয় ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, স্পিকার বিষয়টি নীতি কমিটিতে পাঠাতে চাইলে শাসক শিবিরের আপত্তি নেই। সংসদ বসার আগেই স্পিকারকে সেই বার্তা পৌঁছে দেন বেঙ্কাইয়া।
বেলা বারোটায় প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হতেই, বিষয়টিকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নীতি কমিটির কাছে পাঠানোর কথা ঘোষণা করেন সুমিত্রা। ঘোষণার পরে তৃণমূল সাংসদরা মত জানানোর চেষ্টা করলেও কার্যত তাঁদের অগ্রাহ্য করে লোকসভার কাজ চালিয়ে যান স্পিকার। দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়ে যায় গোটা তৃণমূল বেঞ্চ। অর্ধেক সাংসদই রাজ্যে ভোটের কাজে ব্যস্ত। বর্ষীয়ান সৌগতবাবুর নেতৃত্বেই পাল্টা আক্রমণে যায় তৃণমূল। জিরো আওয়ারে বলার সুযোগ পেয়ে সৌগতবাবু বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্তে স্টিং অপারেশন করাটা একটি প্রবণতা হয়ে দাঁড়াবে।’’ দল মনে করছে, যে ভাবে তাঁদের বলতে না দিয়ে একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা নজিরবিহীন। সৌগতবাবু বলার সময় তাঁকে দফায় দফায় বাধা দেন সিপিএম ও কংগ্রেস সাংসদেরা। আপত্তি ওঠে বিজেপি শিবির থেকেও। স্পিকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানো নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শাসক শিবিরের রাজীবপপ্রতাপ রুডি।
রাজ্যসভাতেও আজ ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে সরব হন বিরোধীরা। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘যৌথ সংসদীয় কমিটি বা নীতি কমিটিকে দিয়ে তদন্ত হোক। বেলা এগারোটা থেকে বারোটা পর্যন্ত এক ঘণ্টা কিছুটা নজিরবিহীন ভাবেই ওয়েলে নেমে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হন সিপিএম সাংসদরা। বামেদের বিক্ষোভের মধ্যেই, নারদ প্রসঙ্গে দুবাই-যোগের উল্লেখ করে সরব হন ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এর পিছনে বিদেশি অর্থ রয়েছে। রয়েছে রাজনৈতিক চক্রান্ত।’’