ফাইল চিত্র।
সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার ঠিক আগেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাণ্ডে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সনিয়া গান্ধীর ইডি-র দফতরে হাজিরা নিয়ে যখন উত্তাল কংগ্রেস, অন্য বিরোধী দলগুলি পাশে থাকলেও সতর্ক ভাবে তা এড়িয়ে যেতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল সাংসদদের। ইডি-র নামোচ্চারণ না করে মূল্যবৃদ্ধি এবং জিএসটি নিয়ে তাঁদের বিজেপি-বিরোধিতার সুর চড়াতে দেখা গেল বাদল অধিবেশনের প্রথমার্ধে। কিন্তু সোমবার শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতকে ইডি-র গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে সমস্ত বিরোধীদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে দেখা গেল তৃণমূলকে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যসভায় সরব হয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। পাশাপাশি ইডি-র অপব্যবহার নিয়ে সমস্ত বিরোধী দল একজোট হয়ে যে বিবৃতিটি প্রকাশ করতে চলেছে তাতে সই থাকবে তৃণমূলেরও।
রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠছে কেন এই বদল? এই সপ্তাহ দিল্লিতে তৃণমূলের জন্য বিশেষ গুরত্বপূর্ণ। সপ্তাহের মাঝে দিল্লিতে আসছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। থাকবেন রবিবার পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে তাঁর। এমতাবস্থায় বাম এবং কংগ্রেসের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি আসছেন কি পরিস্থিতি সামাল দিতে? মমতা যখন দিল্লিতে থাকবেন তখন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন, যাতে অংশ নিচ্ছে না তৃণমূল। বিরোধীদের তরফ থেকে তাদের প্রার্থী মার্গারেট আলভার পাশে থাকার জন্য মমতাকে অনেক অনুরোধও করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কিছুটা ভারসাম্য রক্ষার দায় রয়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের। সঞ্জয় রাউতের প্রশ্নে যে ভাবে বিরোধীরা এককাট্টা হয়েছেন, সেখান সরে দাঁড়ালে তা চোখে পড়তে বাধ্য। আজ রাজ্যসভায় ‘পয়েন্ট অব অর্ডার’ তুলে ডেরেক উঠে দাঁড়িয়ে সঞ্জয় রাউতের ইডি-র হাতে গ্রেফতার হওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অন্য দিকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সঞ্জয়ের ছবি-সহ টুইট করে বলেছেন, “রাজার বার্তা স্পষ্ট। তাঁর সঙ্গে যিনি লড়বেন তাঁকে বিপদে ফেলা হবে। সরকারি সংস্থাগুলির অপব্যবহার করে বিরোধীদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার প্রয়াস চলছে। কিন্তু অত্যাচারীরা শুনে রাখুন, শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হবে, অহঙ্কার হারবে।”
রাজনৈতিক শিবির আরও একটি বিষয় তুলে ধরছে। ইডি যে ভাবে শিবসেনার নেতাকে গ্রেফতার করেছে তার প্রতিবাদে একজোট সব বিরোধী দল। কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও ইডি অভিযান চালালে, কেউ তখন তৃণমূলের পাশে দাঁড়ায়নি। কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী যেখানে পার্থকে নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করেছিলেন, সেই অধীরই আজ সঞ্জয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বলেছেন, “রাউতের একমাত্র অপরাধ হল উনি বিজেপির ভয় দেখানোর রাজনীতির সামনে মাথা নত করেননি। তিনি সাহস দেখিয়ে নিজের অবস্থানে অটল থেকেছেন। তাই আমরা ওঁর পাশে আছি।” রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেছেন, “বিজেপি আসলে বিরোধীমুক্ত সংসদ চাইছে, সেই জন্য রাউতকে এ ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। সঞ্জয় নিজে লড়ছেন। বিজেপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করে বিরোধীদের গ্রেফতার করছে। এরা চায় না সংসদে বিরোধীরা সরব হোক।”
একই ভাবে যে বামেরা পার্থ প্রসঙ্গে তৃণমূলকে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্য সরকারের তালিকায় ফেলেছে, সেই বাম দল সিপিএমের নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, যে মোটের উপরে স্পষ্ট, সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতি করা হচ্ছে। পার্থ এবং সঞ্জয়ের মধ্যে কী তফাত করা হচ্ছে? বিরোধীদের বক্তব্য, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত ইডি-র তদন্ত হচ্ছে হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে। আর সঞ্জয়ের ক্ষেত্রে ইডি নিজেরা নেমেছে। মাত্র এগারো লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি।
কংগ্রেস, সিপিএম এবং অন্য বিরোধী দলগুলি সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায় নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। কারণ বিচারপতি এ এম খানউইলকরের বেঞ্চ সম্প্রতি ইডি-র যাবতীয় গ্রেফতারি, তল্লাশি, আটকের ক্ষমতা এবং জামিন পাওয়ার কঠিন শর্তে সিলমোহর দিয়েছে। বিচারপতি খানউইলকর এই রায় দেওয়ার দু’দিন পরেই অবসর নিয়েছেন। তাঁকে পরবর্তী লোকপাল বা আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের পদে বসানো হতে পারে বলে জল্পনা। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলগুলি এককাট্টা হয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় সম্পর্কে এবং ইডি-র অপব্যবহার বা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার নিয়ে বিবৃতি জারি করতে চলেছেন। সব দলগুলি মিলে এই বিবৃতির খসড়া তৈরি হচ্ছে যা মঙ্গলবারই প্রকাশ করা হবে। বিবৃতিতে সুপ্রিম কোর্টের ওই রায় পর্যালোচনা করার আর্জি জানানো হতে পারে বলে সূত্রের খবর।