শালু সৈনি। ফাইল চিত্র।
যাঁর কেউ নেই, তাঁর ভগবান আছেন। এ কথা আমরা হামেশাই শুনে থাকি। ঠিক তেমনই অজ্ঞাতপরিচয় মৃত ব্যক্তিদের জন্য রয়েছেন শালু। মৃত্যুর পর যাঁদের দেহ নিতে কেউ আসেন না, বা কোনও দাবিদার থাকে না, এমন বেওয়ারিশ লাশের শেষযাত্রার ব্যবস্থা করেন তিনি।
শালু সৈনি। উত্তরপ্রদেশের মুজফফরপুরের বাসিন্দা। তিনি এক জন সমাজকর্মী। সংবাদের শিরোনামে এসেছিলেন কোভিডের দ্বিতীয় স্ফীতির সময়কালে। অর্থাৎ ২০২১-এ। ওই সময়ে এমন বহু মানুষ মারা গিয়েছেন, যাঁদের অনেকেরই আত্মীয়-স্বজন সেই দেহ নিতে আসেননি। তা ছাড়া বহু অজ্ঞাতপরিচয় মানুষ যাঁদের মৃত্যু হয়েছিল, নিজে হাতে সেই সব বেওয়ারিশ লাশের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন শালু।
তাঁর কথায়, “ওই সময় যখন নিজের লোকেরাই করোনায় মৃতদের নিতে অস্বীকার করছিলেন, সেই সব ব্যক্তিদের শেষকৃত্য করার ভার নিই।” এখনও পর্যন্ত এমন পাঁচশোরও বেশি বেওয়ারিশ লাশের শেষকৃত্য করেছেন বলে দাবি শালুর।
তাঁর নিজস্ব একটি সমাজসেবী সংস্থা রয়েছে। সেই সংস্থায় রয়েছেন পাঁচ জন সদস্য। নিজেদের খরচেই বেওয়ারিশ লাশের শেষকৃত্য করেন বলে দাবি শালুর। তিনি জানান, পুলিশ এবং প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এ কাজ করা সম্ভব হত না। বিভিন্ন থানা থেকে তাঁকে খবর দেওয়া হয় যে, বেওয়ারিশ লাশ রয়েছে। সেই সব লাশের শেষকৃত্য করেন শালু এবং তাঁর সঙ্গীরা।
শালুর কথায়, “আমাদের সমাজে মহিলারা শেষকৃত্য করছেন, এমন দৃশ্য দেখা যায় না। সেখানে দাঁড়িয়ে আমি এই কাজ করায় নানা আলোচনাও হয়। কিন্তু সেই সব বিতর্কে না গিয়ে, আমি শুধু আমার কাজটাই করার চেষ্টা করি। যে কাজ পুরুষরা করতে পারছে, সেই কাজ কেন মেয়েরা করতে পারবে না?”
শালু আরও বলেন, “নিজের লোকেরাই যখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, দেহ নিতে চাইছেন না, তখন সেই ব্যক্তির শেষকৃত্যের দায়িত্ব নিতে পেরে আমার ভালই লাগে। তখন মনে হয়, ওই ব্যক্তির সঙ্গে আগের জন্মে হয়তো আমার কোনও সম্পর্ক ছিল।”