গ্রীষ্মকাল মানেই ফলের রাজার আগমনের সময়। আম খেতে ভাল লাগে না এমন মানুষ খুব কমই রয়েছেন। আমপ্রেমীদের জন্য তাই এই সময়টা আরও প্রিয়।
এই আমের প্রেমে পড়েই বড় কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেন তামিলনাড়ুর এক চাষী। হারিয়ে যাওয়া এক আমের প্রজাতিকে নতুন করে ফিরিয়ে আনেন তিনি। যা দেখে তাজ্জব হয়ে যান তামিলনাড়ুর হর্টিকালচার দফতরের গবেষকরাও।
তামিলনাড়ুর ওই চাষীর নাম কেএস জগন্নাথ রাজা। ৬৪ বছরের এই মানুষটি বংশ পরম্পরায় চাষাবাদই করে আসছেন।
তামিলনাড়ুর রাজাপালায়ামে তাঁর পারিবারিক চাষের জমি রয়েছে। প্রায় ১০ একরের ওই জমির দেড় একর অংশে শুধু মাত্র আম চাষ হয়।
নানা প্রজাতির আম গাছ সেখানে রয়েছে। খুব ছোট থেকে তাই বিভিন্ন প্রজাতির আম দেখে এবং খেয়ে বড় হয়েছেন তিনি।
নব্বইয়ে দশকে পেরিয়াকুলামের হর্টিকালচার কলেজ অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট ‘পুলিয়ারি’ নামে এক আমের প্রজাতিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। এটা ছিল সম্পূর্ণ দেশীয় আমের একটি প্রজাতি।
কেএস জগন্নাথ রাজার মনে ছিল, এক সময় এই আমের গাছ তাঁদের জমিতেও ছিল। গাছ থেকে আম পেড়ে ছোটবেলায় অনেক পুলিয়ারি আম খেয়েওছিলেন তিনি।
হর্টিকালচার কলেজ অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট এই প্রজাতিকে বিলুপ্ত ঘোষণার পর থেকেই নতুন করে এই আমের প্রজাতি ফিরিয়ে আনার জেদ চেপে বসে তাঁর মনে।
পরিবারের বড়দের কাছ থেকে শোনা কথাগুলো তাঁর মনে ছিল। তিনি জানতেন, এখনও হয়তো খুঁজলে তাঁদের জমিতে অন্তত একটা এই প্রজাতির গাছ পাওয়া যাবে।
খুঁজেও পান তিনি। প্রজাতিটাকে সংরক্ষণ করার জন্য প্রথমেই দরকার ছিল এর চারা বানানোর। গ্রাফ্টিংয়ের মাধ্যমে ২০০৩ সালে এই প্রজাতির আমের চারা তৈরি করেন তিনি।
গ্রাফ্টিংয়ের মাধ্যমে ঠিকঠাক চারা পেতে প্রায় দু’বছর সময় লেগেছিল তাঁর। তার পর প্রথমেই যেটা করেন, একটা চারা নিয়ে তামিলনাড়ুর হর্টিকালচার ইনস্টিটিউটে পৌঁছে যান। বিলুপ্ত ঘোষিত এমন একটা প্রজাতিকে চোখের সামনে দেখে রীতিমতো তাজ্জব হয়ে যান গবেষকরা।
এই প্রজাতির আরও চারা বানিয়ে তিনি পার্শ্ববর্তী আমচাষীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করেন।
এই মুহূর্তে পোট্টালাম, পঞ্চভরনম, বাঙ্গানাপাল্লি-র মতো বিপন্ন আমের প্রজাতিদেরও বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন তিনি।
তাঁর পারিবারিক চাষের জমিতে এখন প্রায় ১৫ প্রজাতির ২৫ হাজার আমগাছ রয়েছে।