নিজের রেস্তোরাঁয় ভেঙ্কটরমন। ছবি: সংগৃহীত।
প্রতিদিনের মতো সে দিনও নিজের হোটেলের কাউন্টারে বসে হিসেব মেলাচ্ছিলেন তিনি। হঠাত্ কানে এল, ‘দু’ প্লেট ইডলি দাও তো বাবা!’ চোখ তুলে দেখলেন, এক বৃদ্ধা আঁচলের গাঁট থেকে টাকা বের করতে ব্যস্ত। তিনি (হোটেলের মালিক) বললেন, ‘ইডলি ফুরিয়ে গিয়েছে। আপনি বরং দোসা নিয়ে নিন।’ ইডলি ফুরিয়ে গিয়েছে শুনে কিছু ক্ষণ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ক্ষীণ গলায় বললেন, ‘আমার কাছে যা টাকা আছে, তাতে দু’জন ইডলি খেতে পারতাম। দোসা কিনলে তো এক জনকে না খেয়ে থাকতে হবে। আচ্ছা...’ বলেই ঘুরে হোটেল থেকে বেরিয়ে যেতে পা বাড়ালেন। বৃদ্ধার কথা শুনে মনটা বড় খারাপ হয়ে গেল তাঁর। সে দিনই তিনি ঠিক করলেন, আর কোনও দুঃস্থ মানুষ পয়সার অভাবে তাঁর হোটেল থেকে অভুক্ত যাবে না। সে দিন ওই বৃদ্ধাকেও অভুক্ত অবস্থায় যেতে দেননি তিনি।
সালটা ২০০৮। সেই থেকে মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে দরিদ্র মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন তামিলনাড়ুর বাসিন্দা ভেঙ্কটরমন৷ তামিলনাড়ুর ইরড জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন তাঁর ছোট্ট খাবারের দোকান এখন রেস্তোরাঁ। ১ টাকার কুপনে খাবারের মান বা পরিমাণ কিন্তু আর পাঁচটা সাধারণ রেস্তোরাঁর মতোই। ভেঙ্কটরমন জানান, সাধারণ রেস্তোরাঁয় যে খাবারের দাম ৫০-৬০ টাকা, সেই একই খাবার তিনি ১ টাকার কুপনে দরিদ্র মানুষের মুখে তুলে দিচ্ছেন শেষ প্রায় ৯ বছর ধরে। দিনে ২০টি কুপন দিয়ে শুরু করে বর্তমানে তিনি দিনে এমন ৭০টি কুপন বিলি করেন। সবটা নিজের হাতে করা সম্ভব নয়। তাই এ ক্ষেত্রে ইরড জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাহায্য চেয়েছিলেন তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে এই কুপন বিলির দায়িত্ব নেয়।
আরও পড়ুন: মৃত্যুর সাত দশক পরে শেষকৃত্য মার্কিন সেনার
১ টাকার কুপন দিচ্ছেন ভেঙ্কটরমন। ছবি: ফেসবুক।
কী ভাবে বছরের পর বছর এই কাজ করে চলেছেন ভেঙ্কট?
কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অনুদানের টাকায় নয়, নিজের গাঁটের কড়ি খসিয়েই গত ৯ বছর ধরে দরিদ্র মানুষের সেবা করে আসছেন ভেঙ্কট। পাশে অবশ্য পেয়েছেন তাঁর রেস্তোরাঁর ক্রেতাদের। এমন অনেক ক্রেতাই রয়েছেন, যাঁরা বিলের চেয়ে কিছু অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে যান ভেঙ্কটকে। অথচ তাঁর নিজেরই অভাবের সংসার। টাকার অভাবে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে আর লেখাপড়ার বিশেষ সুযোগ পাননি তিনি। ভেঙ্কটরমনের স্ত্রী একটি সংস্থায় যোগার প্রশিক্ষক। তাঁদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছোট মেয়েকে কলেজে ভর্তি করার সময় টাকার অভাবে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তাঁকে। অনেক জায়গায় সাহায্য চেয়েও মেয়ের কলেজে ভর্তির প্রয়োজনীয় টাকা যখন জোগাড় করতে পারেছেন না, তখন তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে রামকৃষ্ণ মঠ। মঠের পক্ষ থেকেই ভেঙ্কটরমনের মেয়ের ভর্তির সব খরচের দায়িত্ব নেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর ছেলে বর্তমানে ভারতীয় রেলের কর্মী। তাঁর রেস্তোরাঁর ব্যবসায় লাভ একেবারে নামমাত্র। সংসারে অভাব অনটন মাঝে মধ্যেই মাথা চাড়া দেয়। তাও গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে খুশি ভেঙ্কটরমন। ভবিষ্যতে ৭০টি কুপন বাড়িয়ে ১০০টি করার ইচ্ছেও রয়েছে তাঁর। কাজটা কঠিন হলেও এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে প্রস্তুত তিনি।