বড়দের হাতে হাতে টেলিফোনের পোস্ট মেরামতি করছিল ৫ বছরের শিশু। সেটা ছিল ২০০১ সাল। ভাগ্যক্রমেই এক সহৃদয় ব্যক্তির চোখে পড়ে যান। সেই দিনটাই ছিল তাঁর ভাগ্য বদলানোর দিন।
শিশুশ্রমিক থেকে আজ তিনি একজন সমাজকর্মী এবং আইনজীবী। নিজের জন্য লড়ার পর এ বার আদালতে ১৭ বছরের এক ধর্ষিতার জন্য লড়াই করছেন তিনি।
যে সহৃদয় ব্যক্তি সে দিন তাঁকে উদ্ধার করেছিলেন, তিনিই টুইটারে ওই যুবকের কথা শেয়ার করেছেন। তিনি হলেন নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থী। আর সে দিনের সেই শিশুশ্রমিক হলেন আজকের ২২ বছরের যুবক অমর লাল।
রাজস্থানের এক যাযাবর পরিবারে জন্ম অমরের। অমরই তাঁদের পরিবারের একমাত্র, যিনি স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা শিখেছেন। তাঁদের পরিবারে শিশুদের কাজ করাই রীতি ছিল।
এ রকমই একদিন টেলিফোনের পোস্ট মেরামতি করার সময় তিনি চোখে পড়ে যান নোবেলজয়ী সমাজকর্মী কৈলাস সত্যার্থীর।
কৈলাস সত্যার্থী আগেও বহু শিশুশ্রমিককে উদ্ধার করে পড়াশোনা করিয়েছেন। তাঁদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাঁর ‘বচপন বাঁচাও’ আন্দোলনের মাধ্যমে অমরকেও ওই দিন তিনি উদ্ধার করেন।
তারপর থেকে কৈলাস সত্যার্থীর কাছেই বেড়ে ওঠা অমরের। সেখানেই পড়াশোনা। নয়ডার আইন কলেজে পড়াশোনা করেছেন ২২ বছরের অমর। সম্প্রতি ১৭ বছরের এক ধর্ষিতার হয়ে আদালতে সওয়ালও করেছেন। তাঁর ইচ্ছা ওই ধর্ষিতার মতোই আরও নির্যাতিতার পাশে দাঁড়ানো। তাঁদের হয়ে লড়াই করা।
অমরের সেই কাহিনি টুইটারে শেয়ার করেছেন কৈলাস সত্যার্থী। তিনি লিখেছেন, “আজ, আমার ছেলে অমর লাল ১৭ বছরের এক ধর্ষিতার জন্য আদালতে দাঁড়িয়েছেন। মাত্র ৫ বছর বয়সে উদ্ধার হওয়া এই উজ্জ্বল তরুণ আইনজীবীর জন্য আমরা গর্বিত।”
শুধু অমরই নন, কৈলাস সত্যার্থীর হাত ধরে এমন হাজার হাজার শিশুরা জীনযুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ২০০৩ সালে যেমন মাত্র ৮ বছর বয়সে উদ্ধার হওয়া রাজস্থানের কিংশু কুমার বিটেক শেষ করে আইএএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দিল্লির কাপড় কলের ঘিঞ্জি চৌহদ্দি থেকে উদ্ধার হওয়া ১০-১১ বছরের শেখ মেহবুব তেমনই স্বপ্ন দেখছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হওয়ার। শেখ মেহবুবের বাড়ি বিদ্যাসাগরের বীরসিংহ গ্রামের পাশের গ্রামে।
উদ্ধার হওয়া ১০-১১ বছরের সেই ছেলেটি আজ ২৩ বছরের কিশোর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে হস্টেলে থেকেই আইন নিয়ে পড়াশোনা চালিয়েছেন তিনি।