এটাই মোদীর নতুন ভারত! অলওয়ার-খোঁচা রাহুলের

অলওয়ারে ‘গোরক্ষকদের’ হামলায় আকবর খানের মৃত্যু নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে নিশানা করলেন রাহুল গাঁধী। জবাবে বিজেপি জানাল, রাহুল ‘শকুনের রাজনীতি’ করছেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০৪:২১
Share:

রাহুল গাঁধী। ফাইল চিত্র।

অলওয়ারে ‘গোরক্ষকদের’ হামলায় আকবর খানের মৃত্যু নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে নিশানা করলেন রাহুল গাঁধী। জবাবে বিজেপি জানাল, রাহুল ‘শকুনের রাজনীতি’ করছেন।

Advertisement

অলওয়ারে তথাকথিত গোরক্ষকদের হামলার পরে আক্রান্ত আকবর খানকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পুলিশ তিন ঘণ্টা সময় লাগিয়েছে বলে দাবি সংবাদমাধ্যমের একাংশের। সে কথা উল্লেখ করে রাহুল এ দিন টুইটারে লেখেন, ‘‘মৃতপ্রায় আকবর খানকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পুলিশের তিন ঘণ্টা সময় লেগেছিল। কারণ, পুলিশকর্মীরা রাস্তায় চা খেতে দাঁড়িয়েছিলেন। এটাই মোদীর নতুন ভারত। যেখানে মানবতার জায়গা নিয়েছে ঘৃণা। মানুষকে এখানে পিষে দিয়ে মরার জন্য ফেলে রাখা হয়।’’

রাহুলের এই মন্তব্যের পরে বিজেপিকে নিশানা করেন অন্য বিরোধী নেতারাও। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের একটা কাঠামো আছে। আমরা গণতন্ত্রের লড়াই না লড়ে ধর্মের লড়াই লড়ছি কেন? আমাদের ধর্ম সহনশীলতা, সহিষ্ণুতা। কাউকে খুন করে আসা নয়। অন্য ধর্মকে ঘৃণা করা নয়।’’ আকবরের মৃত্যুর ক্ষেত্রে ‘গাফিলতি’র জন্য অলওয়ার পুলিশের এএসআই মোহন সিংহকে সাসপেন্ড করেছে বসুন্ধরা রাজে সরকার। দু’জন কনস্টেবলকে পুলিশ লাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক পুলিশকর্মীর তোলা ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে নিজের ভুলের কথা স্বীকার করছেন মোহন সিংহ। তিনি বলছেন, ‘‘হ্যাঁ, আমি ভুল করেছি। আমায় শাস্তি দাও।’’

Advertisement

বিরোধীদের তিরের জবাবে সরাসরি রাহুলকে নিশানা করে বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল, স্মৃতি ইরানিরা জানান, রাহুল কোনও অপরাধ হলেই লাফিয়ে উঠছেন। এটা ‘শকুনের রাজনীতি’। পীযূষের মতে, ‘‘আকবরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দেরির অভিযোগ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছে রাজস্থান সরকার। কিন্তু রাহুল হচ্ছেন মৃত্যুর সওদাগর।’’ স্মৃতি ইরানির বক্তব্য, ‘‘১৯৮৪ সালে দেশের সবচেয়ে ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ভাগলপুর, নেলিতে। আরও অনেক দৃষ্টান্ত আছে। তখন রাহুলের পরিবার ক্ষমতায় ছিল। তিনিও ভোটের জন্য সমাজের বন্ধন নষ্ট করার কোনও সুযোগ ছাড়ছেন না।’’

এর মধ্যেই মারধরের পরে আকবর খানের কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে একটি ওয়েবসাইট। সেই ছবিগুলিতে আকবরকে আহত মনে হলেও মৃতপ্রায় বলে মনে হচ্ছে না। আলওয়ারের রামগড় গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আকবরকে মৃত ঘোষণা করেছিলেন চিকিৎসক হাসান আলি। ছবিগুলি দেখে তিনি বলেছেন, ‘‘আকবরকে যে অবস্থায় দেখেছিলাম তার সঙ্গে এই ছবিগুলির মিল নেই।’’ ফলে তিন ঘণ্টা দেরির জন্যই আকবরের মৃত্যু হয়েছে কি না তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, মারধরের ফলে আকবরের পাঁজরের হাড় ভেঙে যায়। তার ফলে ফুসফুসে জল ঢুকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

এ দিন খুন নিয়ে বয়ান বদলেছেন আকবরের বন্ধু ও প্রত্যক্ষদর্শী আসলম। গোরক্ষকদের হামলার সময়ে আকবরের সঙ্গেই ছিলেন আসলম। তিনি কোনওক্রমে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচান। গত কাল সংবাদমাধ্যমকে আসলম বলেন, ‘‘হামলাকারীরা কে ছিল তা আমি বলতে পারব না।’’ কিন্তু এ দিন পুলিশকে দেওয়া লিখিত বয়ানে তিনি বলেছেন, ‘‘হামলাকারীরা বার বার বলছিল ওরা বিধায়কের লোক। তাই ওদের কিছু হবে না। ওরা আকবরের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল।’’ আসলমের আরও দাবি, হামলাকারীরা পরস্পরকে সুরেশ, বিজয়, পরমজিৎ, নরেশ ও ধর্মেন্দ্র বলে সম্বোধন করছিল।

অলওয়ারের ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর প্রপৌত্র তুষার গাঁধী ও সমাজকর্মী তেহসিন পুনাওয়ালা। তাঁদের আর্জিতেই গণপিটুনি রুখতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। এখন ওই আবেদনকারীরা নির্দেশ অমান্য করার জন্য রাজস্থান সরকারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। কোর্ট জানিয়েছে, ২৮ অগস্ট এই আবেদনের শুনানি হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement