বাস্তবের অসুর পরিবেশ ধ্বংস করছে। অতএব তাকে বধ করো।
পুজো মণ্ডপে অসুরের যে মূর্তি, সেই চেহারা বাস্তবে দেখা যায় না। তবে যা কিছু অশুভ, খারাপ, ধ্বংসাত্মক, তা-ই তো অসুর। যেমন, পরিবেশ দূষণ। সেই অসুর যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে, মুম্বইয়ের অন্যতম প্রাচীন দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তারা সেটা বরাবর মাথায় রাখেন। সেই জন্যই প্রচলিত উপকরণ প্লাস্টার অব প্যারিসের বদলে ‘বম্বে দুর্গাবাড়ি সমিতি’-র প্রতিমা তৈরি হয় কাঠ, মাটি, ও খড়ের মতো পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে। আর এ বার প্রতিমার রঙের ক্ষেত্রেও দূষণ-অসুরকে জব্দ করার কথা মাথায় রেখেছেন উদ্যোক্তারা।
সমিতির সভাপতি জয়ন্ত বসুর কথায়, ‘‘এখন সব চেয়ে অশুভ বা খারাপ হলো পরিবেশ দূষণ। আমাদের পুজোয় সেটা সব সময়ে মনে রাখা হয়।’’ প্রতিমা কমিটির আহ্বায়ক মিতালি পোদ্দার বলেন, ‘‘তেল রং নয়, জলে মিশে যাবে এমন পরিবেশ-বান্ধব রং এ বার আমরা প্রতিমায় ব্যবহার করেছি।’’
দক্ষিণ মুম্বইয়ের কেম্পস কর্নারের এই পুজোর এ বার ৮৮তম বছর। ওই তল্লাটে বহু পুরনো বাঙালি পরিবারের বসবাস। পুজোর আয়োজকও মূলত প্রবাসী বাঙালিরা। পুজোর জায়গা তেজপাল হল সংলগ্ন মথুরাদাস ভিসিনজী হল-কে গড়া হয়েছে রাজপ্রাসাদের আদলে। দেওয়াল, স্তম্ভ দেখে মনে হবে শ্বেতপাথরের তৈরি, সঙ্গে মুক্তো ও দামি পাথরের কাজ। ঠাকুর এ বার একচালার। মা দুর্গাকে পরানো হচ্ছে ভারী ব্রোকেড বেনারসি। মহারানির সাজ তাঁর। লক্ষ্মী আর সরস্বতীর সাজ রাজকুমারীর এবং গণেশ ও কার্তিকও রাজকুমার। প্রতিমার চালচিত্রে আঁকা পটচিত্র।
সোমবার, পঞ্চমীর রাত ৮টায় পুজোর উদ্বোধন। রোজ দুপুরে খিচুড়ি ভোগ। সঙ্গে বেগুনি, আলুভাজা, কুমড়ো ভাজা, পটল ভাজা, লাবড়া, চাটনি, পাঁপড়, পায়েস। পুজোর ক’টা দিন আড়াই-তিন হাজার দর্শনার্থী এখানে এসে প্রসাদ নেন। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এ বছর এখানকার খাবারের স্টলে থাকছে কলকাতার ফুচকা (মানে মুম্বইয়ের পানিপুরি নয়!) আর ঝালমুড়ি (ভেলপুরি নয়!)। তা দেওয়া হবে ভাঁড়ে। সন্ধ্যায় বিক্রি হবে শিঙাড়া, ভেজিটেবল চপ, লুচি-তরকারি। রোজ সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নবমীতে কুমারী পুজো।